বল কুড়িয়ে নাজেহাল হওয়ার দিন

টস জিতলে কি নেবেন? ম্যাচের আগের দিন প্রশ্ন করা হয়েছিল ফাফ ডু প্লেসিকে। উত্তরে বলেছিলেন, ‘সিদ্ধান্তটা আমরা বাংলাদেশ অধিনায়কের উপর ছেড়ে দেব।’ খোঁচাটা মুশফিক শুনেছেন কিনা জানা যায়নি। তবে আরও একবার নিজে টস জিতে ডু প্লেসির খায়েস পূরন করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ উইকেটে প্রতিপক্ষের হাতে ব্যাট তুলে দিয়ে সারাদিন খেটে মরেছেন উইকেটের জন্য। মওকা পেয়ে ওয়ানডে মেজাজে প্রথম দিনেই ৩ উইকেটে ৪২৮ রান তুলে ফেলেছে প্রোটিয়ারা।
পচেফস্ট্রমে নাজেহাল হওয়ার পরও ব্লুমফন্টেইনে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার কি কারণ মুশফিকের? উইকেটে প্রথম ঘন্টায় পেসারদের জন্য নাকি রসদ ছিল। তা প্রথম ঘন্টায় স্বাগতিকদের চেপে ধরা নাকি ওদের পেসের ঝাঁজ থেকে বাঁচতেই এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত ? প্রশ্ন থেকেই যায়। যে ভাবনাই থাক। তা যে এরমধ্যে বুমেরাং স্কোরকার্ডই বলে দিচ্ছে। সারাদিনে ৫৮টি চার মেরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা। রানরেট ৪.৭৫।অর্থাৎ বল কুড়িয়েই দিন পার করেছে বাংলাদেশ। জার্সি না হলে বোঝায় দায়, টেস্ট নাকি ওয়ানডে।
মানগাউং ওভালের পেসারদের জন্য পিচে বাড়তি বাউন্স আছে। কিন্তু উইকেটে সব মরা ঘাস। বাংলাদেশি পেসাররা তাতে বিষধর হবেন এমনটা ভাবার কারণ নেই। সামর্থ্য বুঝে বল করা যেত। প্রথম দুই সেশনে লাইন লেন্থ ঠিক রেখেও বল করতে পারলেন না রুবেল-শুভাশিসরা। মোস্তাফিজ চেষ্টা করে গেছেন কিন্তু ধন্দে ফেলার মতো কোন ডেলিভারি দেখা যায়নি তার কব্জির ঝাঁকুনি থেকে। ফলে দুই ওপেনার ডিন এলগার ও এইডেন মার্কারামই প্রায় আড়াইশ পর্যন্ত নিয়ে যান দলকে। তাও আবার প্রায় ওভারপ্রতি সাড় চার করে রান তুলে। দুজনেই করে ফেলেন সেঞ্চুরি।
২৪৩ রানে শুভাসিশ রায়ের বাউন্সারে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফাইন লেগে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন এলগার। ১৫২ বলে ১৭ চারে ১১৩ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১৭ সালে করে ফেলেছেন ১ হাজার রান।
চা বিরতির পর কিছুটা গায়ে কিছুটা যেন জোর পান রুবেল হোসেন ও শুভাশিস রায়। পচেফস্ট্রমে অভিষেকে সেঞ্চুরি মিস করা মার্কারাম প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে এগুচ্ছিলেন আরও বড় কিছুর দিকে। ১৪৩ রান করা ডানহাতি ওপেনারকে দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড করেন রুবেল। উইকেটে দাঁত চেপে পড়ে থাকার মাস্টার টেম্বা বাভুমাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শুভাশিস। তার বাড়তি বাউন্সের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে বাভুমা ধরা পড়েন লিটন দাসের গ্লাভসে। ২৭৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ২৮৮ রানে তিন নম্বর উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের প্রথম দিনের সাফল্যেরও তখনই অবসান। দিনের বাকিটা সময় তরতর করে রান বাড়িয়ে গেছেন ফাফ ডু প্লেসি ও হাশম আমলা। এই দুজনকে বিচ্ছিন্ন করার তাগদ দেখা যায়নি বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে।
দিন শেষে হাশিম আমলা অপরাজিত আছেন ৮৯ রানে। ফাফ ডু প্লেসির রান ৬২। একদিনেই ৪২৮ রান করে ফেলার পর হাতে ৭ উইকেট নিয়ে আরও কতদূর যায় স্বাগতিকরা। হতাশ শরীরী ভাষা নিয়ে তাই যেন দেখার অপেক্ষা বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৪২৮/৩ (মার্কারাম ১৪৩, এলগার ১১৩, আমলা ৮৯*, ডু প্লেসি ৬২*; শুভাশিস ২/৮৫, রুবেল ১/৯১)
টস: বাংলাদেশ
Comments