চীন

জন্মহার বৃদ্ধির জন্যে আর্থিক প্রণোদনা

চীনে জন্মহার সংকট দেখা দেওয়ায় সরকার গত মাসে ২ সন্তান নীতি পরিবর্তন করে ৩ সন্তানে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু, অনেক দম্পতি তাদের পরিবার বড় করা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন। এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় জন্মহার বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
এপি ফাইল ফটো

চীনে জন্মহার সংকট দেখা দেওয়ায় সরকার গত মাসে ২ সন্তান নীতি পরিবর্তন করে ৩ সন্তানে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু, অনেক দম্পতি তাদের পরিবার বড় করা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন। এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় জন্মহার বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সরকার পরিচালিত ট্যাবলয়েড পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস গত বুধবার একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বরের পর দক্ষিণের গুয়াংডং প্রদেশের লিয়ানজিং শহরের হুয়াংঝুগেন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের কারো সন্তান জন্মালে সর্বোচ্চ ৫১০ মার্কিন ডলার ভর্তুকি দেওয়া হবে।

পরিবারগুলো এই মাসিক ভর্তুকি সন্তানের বয়স আড়াই বছর হওয়া পর্যন্ত পেতে থাকবে। অর্থাৎ, শিশুপ্রতি প্রায় ১৫ হাজার ডলার ভর্তুকি দেবে সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, লিয়ানজিং শহরের বাসিন্দাদের বার্ষিক গড় আয় ২০১৯ সালে ৩ হাজার ২৯৫ ডলার ছিল।

দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় এবং কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় চীন সরকার জন্মহার বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ উদ্যোগটি হচ্ছে ৩ সন্তান নীতি।

২০২০ সালের আদমশুমারির ফলাফল প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরেই সরকার এই পরিবর্তিত নীতিমালা প্রকাশ করে। শুমারিতে দেখা গেছে, চীনের জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি গত কয়েক দশকের মধ্যে এখন সবচেয়ে ধীরে এগোচ্ছে।

জনসংখ্যার হার বাড়ানোর উদ্যোগের মধ্যে আছে- দেশের বেশ কিছু অংশে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া। গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিমের গানসু প্রদেশের লিনশে কাউন্টিতে দুই অথবা তিন সন্তানসহ পরিবারগুলোকে আবাসনের জন্য ৬ হাজার ২০০ ডলার ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকারও ২ অথবা ৩ সন্তানের অভিভাবকদের জন্য নগদ ১ হাজার ৫০০ ডলার বার্ষিক ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

সিচুয়ান প্রদেশের শহর পানঝিহুয়ায় ২ অথবা ৩ সন্তানের বাবা মা-দের সন্তান প্রতি মাসিক ৮০ ডলার করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যান্য এশিয়ান দেশেও জন্মহার সংকটে ভুগতে থাকা দেশগুলোতে একই ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাপানের শহর নাগিতে দম্পতিদের সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অর্থ দেওয়ার পর সেখানে জন্মহার প্রত্যাশিত পর্যায়ে চলে আসে।

সিঙ্গাপুরের জন্মহার সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল। সেখানেও সরকার গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দম্পতিদের সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে এককালীন আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে।

তবে, চীনে জন্মহার বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন অনেক নারী ও তরুণ-তরুণী। তাদের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতাগুলোর কোনো সমাধান করা হয়নি, যেমন প্রবল লিঙ্গ বৈষম্য, পিতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, জীবনযাপনের খরচ বাড়তে থাকা এবং কমতে থাকা চাকরির সুযোগ।

তারা জানিয়েছেন, সন্তান নিতে গিয়ে নারীদের প্রায়ই নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয় এবং অনেককে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। ফুলটাইম চাকরি করলেও নারীদের কাছে সন্তান পালন ও ঘরের কাজ করার প্রত্যাশা থাকে, যেটি আরও সমস্যা তৈরি করে। চীনে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি নারী কলেজ থেকে পাশ করছেন এবং চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন এবং তারা খুব কম ক্ষেত্রেই এ ধরণের আত্মত্যাগের পথে হাটতে রাজি হন।

এ সমস্যাগুলো শহর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, কারণ সেখানে সাধারণত থাকার খরচ ও চাকরির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া গেলেও বেতন যথেষ্ট নয়।

তবে, কম জনবসতিপূর্ণ পল্লী এলাকায় বিশেষ ধরণের প্রতিবন্ধকতা আছে। লিনশে কাউন্টিতে পরিচালিত একটি স্থানীয় সমীক্ষায় জানা গেছে, একটির বেশি সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে আবাসন, শিক্ষা ও শিশুর লালন-পালনের খরচকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন বাসিন্দারা।

Comments

The Daily Star  | English

Rain, at last, in some parts of Dhaka

After a month-long severe heatwave, Dhaka experienced rain and thundershowers in parts of the capital last night

51m ago