কারেনি রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষ হত্যা করছে: ফর্টিফাই রাইটস
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কারেনি রাজ্যে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, তাদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে, যা যুদ্ধাপরাধের সমান বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস। মঙ্গলবার এ সংগঠনের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংগঠনটি আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে অস্ত্র ও প্রযুক্তি বিক্রি নিষিদ্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নির্দেশিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে।
আগামীকাল বুধবার আসিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এসময় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো।
এক বিবৃতিতে ফর্টিফাই রাইটসের আঞ্চলিক পরিচালক ইসমাইল উলফ বলেন, 'মিয়ানমারের সামরিক সরকার বিশ্ববাজার থেকে অস্ত্র কিনে সাধারণ মানুষ হত্যা করছে এবং এটি অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।'
তিনি বলেন, 'বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার বিষয়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে একটি পরিষ্কার ও সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরিভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে এবং তা সমর্থন করা আসিয়ানের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।'
'মিয়ানমারের কারেনি (কায়াহ) রাজ্যে চলমান যুদ্ধাপরাধ: মে ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২' শীর্ষক ৩৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে দেশটির সামরিক বাহিনী এই সময়ে ওই রাজ্যে অন্তত ৬১ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয় এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে কারেনি রাজ্যের এইচপ্রুসো শহরে 'বড়দিনের আগের গণহত্যা' সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ১ শিশু এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের ২ কর্মীসহ অন্তত ৪০ জন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে।
উদ্ধার করা মরদেহের ময়নাতদন্ত করা মিয়ানমারের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফর্টিফাই রাইটসকে বলেন, 'অনেক লাশের ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ সেগুলো প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছিল।'
তিনি এবং আরও একজন চিকিৎসক অন্তত ৩১টি মরদেহ শনাক্ত করেছেন। তার মধ্যে ৫ জন নারী এবং এবং একজন শিশু ছিল।
ওই চিকিৎসক বলেন, 'অনেকের মুখ কাপড় ঠাসা ছিল। তাই আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।'
'প্রায় প্রতিটি মাথার খুলি ফেটে গিয়েছিল। অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যে কারণে যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারিনি,' বলেন তিনি।
৩১ জন প্রত্যক্ষদর্শী এবং নির্যাতনের পর বেঁচে যাওয়াদের সাক্ষ্য এবং যাচাইকৃত ফটো ও ভিডিওর অপর ভিত্তি করে ফর্টিফাই রাইটস প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কারেনি রাজ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃসংশ আক্রমণ করে। এসময় তারা নারী, শিশু ও পুরুষদের হত্যা করে, বেসামরিক জনবহুল এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও বোমাবর্ষণ করে এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে ভারী কামান ও উড়োজাহাজ ব্যবহার করে।
Comments