মধ্যরাতে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’

সাক্ষ্যপ্রমাণ আইন-১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবিতে মধ্যরাতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছেন নারীরা।

ছবি: সুচিস্মিতা তিথি/স্টার

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে 'চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীন, আর কতদিন' স্লোগানে শাহবাগ থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়। পরে সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদী সমাবেশে নারীরা তাদের দাবি তুলে ধরেন৷

ছবি: সুচিস্মিতা তিথি/স্টার

সেসময় রেইনট্রি হোটেলে ২ শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ ৫ আসামিকে খালাস ও ৭২ ঘণ্টার পর ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান তারা।

পদযাত্রার সংগঠক প্রাপ্তি তাপসী বলেন, 'রেইনট্রি হোটেলে ২ শিক্ষার্থীর যে ধর্ষণ মামলার রায় তাতে আমরা দেখতে পেয়েছি এক বিচারক আদালতে বলেছেন ৩ দিন পরে ধর্ষণ মামলা করতে থানায় যাওয়া হলে যেন মামলাটি না নেওয়া হয়।'

তার মতে, 'বিচার ব্যবস্থা কেমন হলে বিচারক আদালতে দাঁড়িয়ে এ কথা বলতে পারেন! একইসঙ্গে ভিক্টিমের অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। ভিক্টিমের চরিত্র বিচার করার মাপকাঠি রাষ্ট্র ঠিক করে দেয় এই সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারার মাধ্যমে।'

পদযাত্রায় অংশ নিয়ে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই ধারাটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। আজকে আমরা একটি মামলার রায়ে দেখলাম, যে নারীরা বিচার চাইতে এসেছেন তাদেরকে বিচার না দিয়ে বরঞ্চ তাদের চরিত্র নিয়ে কথা বলা হয়েছে। বলা হলো, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে না হলে তার মামলা নেওয়া হবে না। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।'

নৃবিজ্ঞানী ও লেখক রেহনুমা আহমেদ বলেন, 'আইনের যে ধারা বাতিলের দাবিতে আমরা একত্রিত হয়েছি তা যে কত জরুরি সে বিষয়টি আজকের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'একবিংশ শতকে এসে একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের রায় হতে পারে না, যেখানে কিনা বিচারক বলেন যে যারা অভিযোগ এনেছেন তাদের যৌন সম্পর্কের অভিজ্ঞতা আছে। আদালতের বিচার করার কথা, ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা না। এই বিচারক ভেবে বসেছেন তার দায়িত্ব হচ্ছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেওয়া।'

'বিচারক পুলিশকে বলছেন, ৭২ ঘণ্টার পরে ধর্ষণ মামলা না নিতে,' উল্লেখ করে অধ্যাপক রেহনুমা প্রশ্ন করেন, 'তার মানে ধর্ষণ করে ৭২ ঘণ্টা মেয়েকে আটকে রাখলেই পুলিশ আর মামলা নিবে না?'

আজকের 'শেকল ভাঙার পদযাত্রা'য় নানা পেশা-শ্রেণির নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও অংশ নিয়েছেন। পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকলি, অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা, আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা '৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণ ন্যায্য?' 'চলন-বলন-পোশাক রাখো, রাষ্ট্র এবার দায় নাও', 'পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে হোক সমতা', 'পথে ঘাটে দিনে রাতে চলতে চাই নিরাপদে', 'আমার কথা আমি বলবো স্বাধীনভাবে পথ চলবো' ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সাক্ষ্যপ্রমাণ আইন-১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজনও করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

July frontliners dominate the Ducsu race

So far, nine panels have been announced for the 28 Ducsu posts.

8h ago