‘অন্যায়ের বিচার না হলে, সেই কলঙ্ক জাতির গায়েও লাগে’

অন্যায়ের বিচার না হলে, সেই কলঙ্ক জাতির গায়েও লাগে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে স্থানীয় সাঁওতাল-বাঙালিদের শোক র‍্যালি শেষে সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

অন্যায়ের বিচার না হলে, সেই কলঙ্ক জাতির গায়েও লাগে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

আজ শনিবার দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাঁটারমোড়ে স্থানীয় সাঁওতাল-বাঙালিদের এক শোক র‍্যালি ও সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সুলতানা কামাল বলেন, '২০১৬ সালের এই দিনে ৩ জন সাঁওতাল ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ তার ন্যায়বিচার সাঁওতালরা আজও পায়নি। হত্যাকারীরা চিহ্নিত হলেও এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। হত্যার ৫ বছর পূর্ণ হলেও বিচারকাজ সামনে আগাচ্ছে না।'

স্থানীয় সাঁওতালরা ৬ নভেম্বর সাঁওতাল হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

তিনি বলেন, 'একটা জাতি যখন দেশে সংঘটিত অন্যায়-অত্যাচারের বিচার করে না, সেই কলঙ্ক কিন্তু জাতির গায়েও লাগে। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। জাতি হিসেবে আমরা সেই কলঙ্ক বহন করতে রাজি নই।'

'রাষ্ট্রের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যে কোনো অপরাধের বিচার সম্পূর্ণ করা। সেটা যদি না করে, তাহলে আমাদের রাষ্ট্রকেই সেই কলঙ্ক বহন করতে হবে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, তারা কোনো অপরাধ করে সেই কলঙ্ক নাগরিকের উপর আরোপ নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না। আমরা তাদের নিশ্চিন্তে থাকতে দেবো না। আমরা বারবার এই বিচারের দাবি করব। আমরা এই ৩ বন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চাই। আমরা দেখতে চাই যারা এই অপকর্ম করেছিল, তারা বিচারের আওতায় এসে শাস্তি পাচ্ছে।'

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের জমিতে একটি ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে স্থানীয় রংপুর সুগার মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় সাঁওতালদের ওপর হামলা চালায়। এতে রমেশ টুডু, শ্যামল হেমব্রম ও মঙ্গল মার্ডি পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

পুলিশ সাঁওতালদের অস্থায়ী বস্তিতে অগ্নিসংযোগ করে এবং প্রায় ২৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে।

গাইবান্ধা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়ের সাঁওতাল নারী-পুরুষরা এ সমাবেশে যোগ দেন। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

তখন থেকে স্থানীয় সাঁওতালরা ৬ নভেম্বর সাঁওতাল হত্যা দিবস হিসাবে পালন করে আসছেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ স্থানীয় সাঁওতাল-বাঙালিরা শোকসভা ও আলোচনা সমাবেশের আয়োজন করে। গাইবান্ধা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত সাঁওতাল নারী-পুরুষ স্থানীয় বাঙালিদের সঙ্গে এ সমাবেশে যোগ দেয়।

সম্প্রতি সরকার সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের ১৮৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করে একটি ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সাঁওতালরা শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছে। সাঁওতালদের দাবি, এই জমি তাদের পূর্বপুরুষদের এবং রংপুর চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শর্ত অনুযায়ী তারা এই সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার দাবিদার।

এ প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, 'সব জায়গা ছেড়ে সাঁওতালদের বাগদা ফার্মেই কেন ইপিজেড করতে হবে? এটা কোন ধরণের মানসিকতা? তিন ফসলি জমিতে কোন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে না-এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে আছে, আমাদের দেশ পরিচালনা নীতিতে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তার বিভিন্ন বক্তব্যে এই কথা উল্লেখ করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'ইপিজেড হবে দেশের উন্নয়ন হবে, মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ একটা অবস্থান রাখবে। কিন্তু সবসময় সব ছেড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জমিগুলোর প্রতি সরকারের নজর পড়ে কেন? তাদের জীবন-জীবিকার ওপর কেন তাদের দৃষ্টি? নিশ্চয় এটার পেছনে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আছে। আমরা সরকারের কাছে এই প্রশ্নটা তুলে ধরতে চাই যে জনগণের স্বার্থের থেকে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ তাদের কাছে এত বড় হয়ে ওঠে কেন?'

Comments