মদ জব্দ: ‘তথ্য দেওয়ায়’ কাস্টমস কর্মকর্তাকে ‘প্রাণনাশের হুমকি’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা থেকে ২ কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দ করার ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের এক কর্মকর্তাকে বিদেশ থেকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মদ
চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ করা মদ। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা থেকে ২ কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দ করার ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের এক কর্মকর্তাকে বিদেশ থেকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিপিইজেড) কাস্টমস শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) রাশেদুর রহমান বলছেন, ২৩ জুলাই মদ জব্দ করার পরদিন একটি বিদেশি নম্বর থেকে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২৪ জুলাই বন্দর নগরের ইপিজেড থানায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন।

পরে পুলিশ আদালতের কাছে এই জিডি তদন্তের অনুমতি চাইলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একজন কাস্টমস কর্মকর্তা নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করেছেন এবং আমরা তা তদন্ত করছি। ঘটনাটি তদন্ত করে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারব আসলে কী ঘটেছে এবং কারা করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ইপিজেড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রানা প্রতাপ জিডিটি তদন্ত করছেন।'

গত ২২ জুলাই রাতে ভুয়া আইপি (ইমপোর্ট পারমিশন) ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪০ ফুটের দুই কনটেইনার বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের মদ খালাসের পর সোনারগাঁ যাওয়ার পথে র‍্যাব-১১ এর হাতে আটক হয়। এর পরদিন ২৩ জুলাই সকালে এআরও রাশেদকে একটি বিদেশি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে গালাগালি এবং হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

এআরও রাশেদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশাল মদের চালান বন্দর থেকে খালাসের তথ্য পেয়ে এবং তা যাচাই করার পর, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ সম্পর্কে অবগত করি এবং পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সহায়তায় মদের চালানটি নারায়ণগঞ্জে আটক করা হয়।'

'২৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল, যেটি সম্ভবত ইউএসএর নম্বর এবং কলটি রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে গালিগালাজ শুরু করে একব্যক্তি। ওই ব্যক্তি নিজেকে রায়হান বলে পরিচয় দেন এবং আমার কাছে জানতে চান কেন আমি র‌্যাবের কাছে মদের চালান আটক করে দিলাম', বলেন তিনি।

'পরে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং কলটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়,' বলেন রাশেদ।

বন্দর থেকে মদ পাচারের অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। র‌্যাব জানায়, এই জালিয়াতি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ২ ব্যক্তি পিতা ও পুত্র শনিবারই দুবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

র‌্যাব মদের চালানটি আটকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আপনিই (তিনি) যে তথ্যটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়েছেন, তা কীভাবে তারা জানতে পারল এ বিষয়ে জানতে চাইলে এআরও রাশেদুর রহমান বলেন, 'আমি জানি না। যেহেতু পুলিশ এটি তদন্ত করছে, আমি আপনাকে বিস্তারিত বলতে পারছি না। এটা আমার ওপর থেকেও হতে পারে, আবার আমার সোর্স, যিনি আমাকে তথ্য দিয়েছেন, সেখান থেকেও হতে পারে।'

'হুমকির ঘটনার পর, আমি আমার সিনিয়রের সঙ্গে এটি শেয়ার করেছি এবং তারা মৌখিকভাবে আমাকে থানায় জিডি করতে বলেছেন', যোগ করেন তিনি।

জিডি করার দিন ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল পরিমাণ মদ বহনকারী আরও একটি কনটেইনার পাওয়া যায়। পরের দিন ২৫ জুলাইয়েও বন্দরে ২ কনটেইনার মদ ভর্তি অবস্থায় পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে মোট ৫টি মদের কনটেইনার পাওয়ায় গেছে। মদের এসব চালানের নেপথ্যে কারা আছেন, তা জানতে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীরা।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ৫টি কনটেইনারের সব মদই মিথ্যা ঘোষণায় বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে।

কাস্টমস নথি অনুযায়ী, জব্দকৃত চালানগুলো নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি ও মংলা ইপিজেডে অবস্থিত ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ লিমিটেড, হ্যাশি টাইগার কোং লিমিটেড নামে চীন থেকে পলিয়েস্টার সুতা হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল। কুমিল্লা ইপিজেডে ও বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেড, ঈশ্বরদী ইপিজেডে অবস্থিত।

কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এআরও রাশেদুর রহমানকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। এখন পুলিশ তদন্ত করে বের করুক কারা আসলে কাজটি করেছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Anontex Loans: Trouble deepens for Janata as BB digs up scams

Bangladesh Bank has ordered Janata Bank to cancel the Tk 3,359 crore interest waiver facility the lender had allowed to AnonTex Group, after an audit found forgeries and scams involving the loans.

11m ago