বাংলাদেশ

আমাদের ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত: ডা. জাফরুল্লাহ 

পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা সবাই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছি। সরকার সব চাইতে বেশি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে, তারপর আমরা। তাই আমাদের এখনই ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে, তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’
ছবি: সংগৃহীত

পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, 'আমরা সবাই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছি। সরকার সব চাইতে বেশি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে, তারপর আমরা। তাই আমাদের এখনই ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে, তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।'

বুধবার রংপুরের পীরগঞ্জে মাঝিপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'আজকে আগুনের যে লেলিহান শিখা এখানে দেখছি। আমার মনে হয়, ১৯৭১ সালেও এ ধরনের ঘটনা দেখি নাই। আজকে এ ধরনের ঘটনা, সরকারের ব্যর্থতা। তা না হলে কুমিল্লার ঘটনার পর এ ধরনের আর একটা ঘটনাও ঘটার কথা ছিল না।'

তিনি বলেন, 'দুএক জন পাগল একটা দেশে থাকতে পারে। তারা কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।'

মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক বলেন, 'আমি শুধু সরকারকে বলছি না। সরকারি দল, বিরোধী দল আপনারা সবাই যদি কুমিল্লার ঘটনার পর সেখানে যেতেন, তবে আজকের এই ঘটনাগুলো ঘটতো না, সাহস পেত না।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে দেশে যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার একমাত্র সমাধান করতে পারে জাতীয় সরকার। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে একটি কার্যকর রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় সরকারের বিকল্প নেই।'

ডা. জাফরুল্লাহ  বলেন, 'মাঝি পাড়া, যেখানে দরিদ্র জেলেরা থাকেন সেখানে হামলা করা হচ্ছে। আমরা অর্থহীন লেখাপড়া করেছি। আমাদের বোঝা উচিত ছিল, এরাই আমাদের সবচেয়ে আপনজন। আমি জানি না, কার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইব, কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করব। আমি এতটুকু বলতে চাই, আমরা তাদের হৃদয়ের বেদনা তো মুছে দিতে পারব না। তবে, আগামী এক মাস তাদের খাবার ব্যবস্থা করব। আর জেলেদের অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব করে সেটারও কী করা যায় আমরা দেখব।'

'আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি পুরোহিত-আলেম সবাইকে নিয়ে এখানে আসেন। আপনি যদি আসেন, তাহলে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। শুধু বললে চলবে না, আমরা বিচার করব। কোথায় বিচার হয়েছে? আজকে গাইবান্ধায় মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেয়নি, আহমেদীয়াদের মিটিং করতে দেয়নি। কোথাও কোনো বিচার হয়নি। তাই, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে দায়িত্ববান হতে হবে। বাকি যেসব বিরোধী দল আছে, তাদেরও দায়িত্ববান হতে হবে। তাদেরও এখানে আসতে হবে।'

সব মন্ত্রীর সেখানে যাওয়া উচিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে আবারও আহ্বান করছি, অনুগ্রহ করে আপনি এখানে নিজে আসুন। আপনি একজন মা। আপনাকে দেখলে এদের দুঃখ অর্ধেক কমে যাবে। আপনাকে দেখলে পুলিশের সাহস বাড়বে। স্থানীয়রা বুঝবে আমরা সবাই তাদের পাশে আছি।' তিনি আরও বলেন, 'আমার আরেকটি প্রার্থনা, আপনি রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন। তারও দেখা উচিত।'

এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২১ সদস্যের টিম নিয়ে পীরগঞ্জ বড় করিমপুর শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির ও তার পাশে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন এবং গণস্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র অসহায় ২৫০ পরিবারের মাঝে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন, নারীপক্ষের নেত্রী শিরিন হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ৬৯-এ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. নুরুজ্জামান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক দিদারুল হক ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইসমাইল, ভাসানী অনুসারী টাংগাইল জেলার সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত খানশুর শুভা, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য চাষী এনামুল হক, যুব ও ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক মো. আল মুকিত, কেন্দ্রীয় সদস্য মুহিব্বুল্লাহ বাহার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ছাত্র ফ্রন্টের নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মাহবুব হক মিলটন, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর সভাপতি সৈকত আরিফ, ছাত্র ফেডারেশনের হামিদুল হক মিয়া, মো. নিজাম ও রংপুর জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।
 

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

25m ago