বারি জাতের তরমুজ চাষে লাভবান পটুয়াখালীর কৃষক

পটুয়াখালীতে অফ-সিজনে (মৌসুম বিহীন) তরমুজ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তরমুজ চাষে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি।
জুনে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২০ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীতে অফ-সিজনে (মৌসুম বিহীন) তরমুজ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তরমুজ চাষে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) পটুয়াখালীর আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত তরমুজের বারি-১ ও বারি-২ জাত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের তরমুজ চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। এ জন্য গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত তরমুজের চারা বিনামূল্যে কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। একই জমিতে বছরে তিন বার এ ধরনের তরমুজ চাষ করা যায়। এ তরমুজের বিশেষত্ব হচ্ছে- এর একটি লাল ও অপরটি হলুদ রংয়ের।

এ তরমুজের বিশেষত্ব হলো- একটি লাল ও অপরটি হলুদ রংয়ের। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

চলতি বছরের জুনে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২০ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। খরচ কম, সারা বছরই আবাদ করা সম্ভব তাই নিজেদের জাতের সঙ্গে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দু'টি জাতের লাল ও হলুদ রঙের তরমুজ চাষে সফলতায় আশপাশের গ্রামের কৃষকরাও বারি-১ ও বারি-২ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

মালচিং পদ্ধতি হচ্ছে জমিতে কাঁদি কেটে একটু উঁচু করে সেটি বিশেষ ধরনের পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া। যেন বৃষ্টিতে গাছের গোড়া পচে না যায়। পলিথিনের নির্দিষ্ট দূরত্বে ছিদ্র করে দেওয়া হয় যেন তরমুজ গাছটি ওই ছিদ্র দিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। কাদির সঙ্গে দেওয়া হয় বাঁশ আর জাল দিয়ে মাঁচা। মাচার ওপরে তরমুজ গাছ বেড়ে ওঠে আর ৮০ দিনের মধ্যে ফল আসে। ফল যেন ছিঁড়ে না পড়ে সেজন্য ফলটি একটি জালের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তরমুজ চাষে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

মালচিং পদ্ধতিতে বাউফল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের এমরান হাসান সোহেল (৪৫) ৩০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। গবেষণা কেন্দ্র থেকে তাকে চারশ তরমুজের চারা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক, সার, বাঁশ, জালসহ সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ইতোমধ্যে ২০০ তরমুজ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছেন। আরও প্রায় ২০০ তরমুজ খেতে আছে এবং ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির আশা আছে তার।

কলাপাড়া উপজেলার কুমিরমারা গ্রামের ওমর ফারুক (৩৫) ৬৬ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।

তিনি জানান, দুবাই থেকে দেশে ফিরে করোনাকালে বেকার না থেকে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ শুরু করেন। জুনে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে দেওয়া এক হাজার চারা রোপণ করেন। চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের ১ হাজার ৪০০ তরমুজ ইতোমধ্যে খেত থেকে তোলা হয়েছে। এখনো ১ হাজার ৩০০ তরমুজ খেতে আছে। ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে খেত থেকেই ক্রেতারা তরমুজ কিনে নিচ্ছেন।

খরচ কম, সারা বছরই আবাদ করা সম্ভব তাই নিজেদের জাতের সঙ্গে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, তরমুজ সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু, তাদের উদ্ভাবিত জাতের তরমুজ সারা বছর চাষ করা সম্ভব। জুনে তারা কৃষকদের মধ্যে ১২ হাজার চারা বিতরণ করেছেন।

তিনি বলেন, 'প্রতি বছর বিদেশে থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার তরমুজ বীজ আমদানি করতে হয়। কিন্তু, ২০২০ সালে আমাদের কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত তরমুজের দু'টি জাত কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষকরা এর বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে। এতে বীজ আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Secondary schools to reopen Saturday, primary on Sunday

Academic activities at all secondary-level educational institutions will resume on Saturday, the Ministry of Education said today

2h ago