‘তিস্তা খুড়ি দ্যাও, হামরাগুলা সুখে থাকমো’

দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া নিজের ছবি দেখছেন কৃষক জয়নাল মিয়া। ছবি: স্টার

'তিস্তা নদীটা খুড়ি দ্যাও তাতে হামরাগুলা সুখে থাকমো। নদীপাড়োত হামরাগুলা সবাই দুখি মানুষ'—কথাগুলো বলছিলেন তিস্তাপাড়ের কৃষক জয়নাল মিয়া (৪৭)।

তার যুক্তি হলো, 'নদী খুড়ি দিলে হামার জমিগুলা জাইগবে, চাষবাষ করি খাবার পামো। তাতে হামারগুলার ডাইল-ভাত জুটবে।'

সম্প্রতি জয়নাল মিয়ার কষ্টের জীবন নিয়ে ছবি ছাপা হয়েছিল দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতায়। তিনি পত্রিকাটি হাতে পেয়ে খুশি হন। মরা তিস্তার তীরে বসে একাকী তাকিয়ে থাকেন পত্রিকার ছাপা ছবির দিকে।

তিনি পড়াশুনা জানেন না, তাই পড়তে পারেননি কী লেখা হয়েছে ছবির ক্যাপশনে। অনেকক্ষণ সেই ছবির দিকে নির্বাক তাকিয়েছিলেন। এভাবে তাদের কষ্টের জীবনচিত্র পত্রিকায় ছাপা হবে তিনি তা কখনো ভাবতেই পারেননি।

জয়নাল মিয়া (৪৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামারগুলার কষ্টের জীবন নিয়া পেপারোত ফটোক ছাপা হইছে। এ্যালা সরকারি লোক থাকি শুরু করে ম্যালা মানুষ আইসবার নাগছে হামারগুলার কাছোত। মোর সংসারের ভালো-মন্দ জাইনবার চাবার নাইগছে। হামাক সাহায্য কইরবে বোলে কবার নাইগছে।'

'কিন্তক, তিস্তার পাড়োত মোর মতোন ম্যালাগুলা চাষি আছে তার সবাইগুলাই কষ্টোত জীবন চালায়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ম্যালাগুলা চাষি আছে কাইও কাইও মোর চ্যায়া বেশি দুখি। কিন্তু, ওমারগুলার খোজ কাইও নিবার নাইগছে না। ওমার বগলোত কাইও যাবার নাইগছে না।'

জয়নাল মিয়া বলেন, 'হামাক হয়তো কাইও সাহায্য কইরবে। হামরা সাহায্য পামো। হামারগুলার সুখ আইসবে। কিন্তু, তিস্তা নদীর জইন্যে হামারগুলার জীবনোত যে কষ্টকোনা আইসছে এইল্যা কোনদিন শ্যাষ হবার নয়। এইকনা কষ্টো সারাজীবন থাকি যাইবে।'

'তিস্তার ভাঙ্গোনোত হামারগুলার চাষবাষের জমি, বাড়ি-ভিটা, ফলমূলের বাগান সোকগুলায় নধরি প্যাটোত চলি গেইছে। এ্যালা হামরা গরিব হয়া গ্যাইছোং। মাঝে-মাঝে না খ্যায় থাকা নাগে,' যোগ করেন তিনি।

জয়নাল মিয়া জানান, যদি তিস্তা খনন করে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে প্রবাহিত করা যেত তাহলে তাদের জমি রক্ষা পেত এবং তা আবাদি জমিতে পরিণত হতো। সে জমি চাষ করে তারা সংসারে চালাতে পারতেন।

এটা করা হলে তিনিসহ তিস্তাপাড়ে সব কৃষকের মুখে হাসি ফুটতো। তার মতে, 'খালি মোর জইন্যে সাহায্য করলে হবার নয়। নদীর পাড়োত সোকগুলা চাষির মুখোত হাসি ফোটা নাইগবে। তা-হইলে না হয় তিস্তা পাড়োত হামারগুলার শান্তি আইসবে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি এলাকায় তিস্তাপাড়ের কৃষক জয়নাল মিয়ার সংসারে স্ত্রী শেফালী বেগম (৪৪), মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জোনাবি খাতুন, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন ও ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন ইসলামকে নিয়ে।

তার বড় ৩ ছেলে সিরাজুল ইসলাম, আকিজুল ইসলাম ও রাকিবুল ইসলাম গড়েছেন পৃথক সংসার। তবে তারা সবাই একই বসতভিটায় বসবাস করেন। তাদের বসতভিটাটি ৭ শতাংশ জমির ওপর।

জয়নাল মিয়ার ৯-১০ বিঘা আবাদি জমির সবই তিস্তার গর্ভে। গত ৫ বছর আগে সবকিছু হারিয়ে তিনি তিস্তার তীরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পলি জমলেই জয়নাল মিয়া সেখানে চাষাবাদ করেন। তার নিজের গরু নেই। পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরাই হাল চাষ করে ফসল ফলান।

জয়নাল মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, একসময় তাদের সংসার সুখের ছিল। আবাদি জমি ছিল, গরু ছিল। এখন কিছুই নেই। তিস্তার ভাঙনে তারা নিঃস্ব হয়েছেন।

তিনি বলেন, 'পেপারোত ফটোক ছাপার জইন্যে হামারগুলার পাশোত ম্যালা মানুষ খাড়া হবার চাবার নাইগছে। সোকগুলা মানুষই হামাকগুলা সাহায্য দিবার চাবার নাইগছে। কিন্তু, হামারগুলার বগলোত ম্যালাগুলা দুখি মানুষ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

One lakh stock accounts closed amid IPO drought in FY25

The stock market has almost closed the books on the fiscal year (FY) 2024-25 without a single company getting listed through an initial public offering (IPO), a rare event not seen in decades.

11h ago