ইউপি সদস্যের গলায় টাকার মালা

টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে তা গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করেছেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রার্থী আমিনুল হক। তার এমন কাজে অসন্তোষ ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিজয়ী সদস্য আমিনুল হক। ছবি: সংগৃহীত

টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে তা গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করেছেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রার্থী আমিনুল হক। তার এমন কাজে অসন্তোষ ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তাও।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আমিনুল হক বিজয় র‌্যালিতে টাকার মালা গলায় পরে গ্রামের রাস্তা ও হাট-বাজার ঘুরেছেন। গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে তিনি তার সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে বিজয় র‌্যালি করেন।

অনেকের মতে, টাকার মালা গলায় পরে আমিনুল হক জানান দিতে চেয়েছেন যে টাকা ছাড়া নির্বাচন হয় না।

যে সব ভোটার তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তাদেরকে জানান দিতে চেয়েছেন যে টাকাগুলো যেন ফেরত দেওয়া হয়—এমন মন্তব্যও করেছেন কয়েকজন।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার অনেক টাকা আছে তাই কেউ যেন তার সঙ্গে লড়তে না আসেন।

এই ওয়ার্ডে সদস্য পদে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৪ জনের অভিযোগ—আমিনুল হক টাকা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। ভোটের ব্যালট গণনা না করেই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

তারা সেদিনই আদিতমারী উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের কাছে ব্যালট পুনরায় গণনার দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেন।

পরাজিত সদস্য প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন. 'আমিনুল হক জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। তিনি টাকার জোরে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই তিনি টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ৪ পরাজিত প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেছি। সুরাহা না হলে আদালতের আশ্রয় নিবো।'

বিজয়ী প্রার্থী আমিনুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিজের ইচ্ছায় টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিনি। জনগণই তাদের টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিয়ে দিয়েছে।'

'কত টাকা দিয়ে মালা তৈরি করেছে তা গুণতে পারিনি। টাকার মালাটা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

তার মতে, 'পরাজিত প্রার্থীরা মিলে যত ভোট পাননি তার চেয়ে বেশি ভোট আমি পেয়েছি। জনগণই আমাকে বিজয়ী করেছেন।'

টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করা আইনসিদ্ধ কিনা এ প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি।

লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিজয়ীদের র‌্যালি নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু, তারা বিধিনিষেধ মানছেন না। টাকা দিয়ে মালা তৈরি করে গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করা একটি অশুদ্ধ কর্ম। এতে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবেন। যেহেতু নির্বাচন পরবর্তী এই ঘটনা সেহেতু আমাদের পক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

আমিনুল হক ১ হাজার ১১১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৫৪৪ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ৬৮৭ জন।

গত ১১ নভেম্বর আদিতমারী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Comments