পানির তোড়ে ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস সড়ক
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারেজের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত ফ্লাড বাইপাস সড়কের একাংশ ভেঙে গেছে। এতে তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা শহরসহ লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
এ ছাড়াও, পানি উঠতে শুরু করেছে চর, দ্বীপচর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকার বাড়ি-ঘরে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে তিস্তাপাড়ের কয়েক হাজার একর জমির আমন ধান, ভুট্টা, বাদাম, আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজী। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কায় মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ৬০ সেন্টিমিটার) ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে আসা পানির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খোলা রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবগুলো। মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানি উঠেছে চর, দ্বীপচর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘরে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের খেত।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা নদীর পানির তোড়ে ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস সড়কের একাংশ। এ কারণে বন্ধ আছে লালমনিরহাটের সঙ্গে নীলফামারীর যোগাযোগ। বাইপাস সড়কের ভাঙা অংশ দিয়ে তিস্তার পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফ্লাড বাইপাস সড়কের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় বুধবার সকাল থেকে নীলফামারী জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে লালমনিরহাটের। যেকোনো সময় সম্পূর্ণ ফ্লাড বাইপাস সড়কটি ভেঙে যেতে পারে।'
ফ্লাড বাইপাস সড়কটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেলে পুরো হাতীবান্ধা উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'আজ বুধবার সকাল থেকে আমার ইউনিয়নের ৪ হাজারেরও বেশি বাড়ি-ঘরে তিস্তার পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আমন ধান ও ভুট্টাখেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।'
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সদস্য শাকিল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে পানিবন্দীদের সহযোগিতা করছেন। অসময়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
'তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ করে প্লাবিত করছে', বলেন তিনি।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, 'তিস্তার পানি প্রবেশ করছে হাতীবান্ধা শহরে। মেডিকেল মোড় বাইপাস পাকা সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। চলাচলের চরম কষ্টে পড়েছেন লোকজন। তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।'
দোয়ানী এলাকার কৃষক মোতালেব হোসেন (৬৫) জানান, প্রতিবার বন্যার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বন্যার আগাম পূর্বাভাস জানানো হলেও এবার তা জানানো হয়নি। ফলে বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তার ৪ বিঘা জমির আমন ধানখেত ও ৯ বিঘা জমির ভুট্টাখেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
গড্ডিমারী এলাকার কৃষক নুর হোসেন (৬০) জানান, অসময়ে বন্যা পরিস্থিতিতে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কারণ বন্যার জন্য তাদের আগাম কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বাড়ি-ঘরে তিস্তা নদীর পানি ঢুকে পড়েছে এবং পানি হু হু করে বাড়ছে। তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তার ওপর।
Comments