পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ২ নির্বাচিত অভিভাবককে মারধর করল ছাত্রলীগ

মানিকগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর করছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

মানিকগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।  

রোববার বিকেলে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'ছাত্রলীগ কর্মীরা ২ অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেছে। অতর্কিতে এ মারধরের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ সে সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে।' 

স্থানীয়রা জানান, উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

২ নির্বাচিত অভিভাবককে মারধর, ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩৮জনের বিরুদ্ধে মামলা
অভিভাবক সদস্যরা নিচতলায় এলে ছাত্রলীগকর্মীরা তাদের মারধর করে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গত ১৮ জুলাই ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য পদে সরাসরি ভোটে ৪ জন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন। 

রোববার সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন দেওয়ান সাইদুর রহমান ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। দুপুর ১টার পর দুই পক্ষের সমর্থকরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। 

পুলিশ দুই পক্ষের সমর্থকদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বেলা ৩টার দিকে ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জনের উপস্থিতিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সুপারভাইজার এবং নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার কামরুল ইসলাম সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য সভা শুরু করেন। 

এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে অভিভাবক সদস্য মহিউদ্দিন মঞ্জু ও মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে নিচতলার সভাকক্ষে যাচ্ছিলেন। সে সময় জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই দুই অভিভাবক সদস্যকে মারধর করে। 

পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। 

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ বহিরাগতদের সেখান থেকে বের করে দেন।

এরপর প্রিজাইডিং অফিসার সভা শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তিনি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।

এদিকে দুই পক্ষের উত্তেজনা এড়াতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সিংগাইর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল হক ও র‌্যাব।

জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকদিন ধরেই সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের পক্ষের লোকজন ও পুলিশ সদস্যরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদের জন্য ভোটারদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছিল। আজ নির্বাচনের দিন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্যের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা ২ অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেছে। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় প্রিজাইডিং অফিসার নির্বাচন স্থগিত করেছেন।'

মারধরের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই কর্মীরা মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।'  

মারধরের বিষয়ে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তাই মারধরের বিষয়ে জানা নাই।'

তিনি বলেন, 'আমি নিজে থেকে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নির্বাচন করতে চাইনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও নির্বাচিত সদস্যরা আমাকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।'

'চারজন অভিভাবক সদস্যসহ ৯ জন ভোটারের মধ্যে অধিকাংশরা যাকে সমর্থন করবেন, তিনিই সভাপতি হবেন। আমিও এটিই চাই,' যোগ করেন তিনি।

Comments