বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই: আইনমন্ত্রী
'আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে তিনি যথেচ্ছা করতে পারেন না। বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই।' চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ বৃহস্পতিবার সংসদে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'ওনারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলবো।'
বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ মানবিক বিবেচনায় দু-একদিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। তা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।'
জিএম সিরাজ আরও বলেন, 'কোভিডের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা চরম অবনতির দিকে হচ্ছে। যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবার থেকে ৫ বার আবেদন করা হয়েছে, দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। তাদের আবেদন, খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দু-একদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক।'
এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জিএম সিরাজ বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন রাগ-বিরাগের বশবর্তী হবেন না। গতকালের ওনার বক্তব্যে বিনয়ের সঙ্গে বলছি, ওনার বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না—এটা কি সঠিক?'
'দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার নজির আছে। ১৯৭৯ সালে আসম আব্দুর রব সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা নাসিম দুদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সুযোগ পান।'
'সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না? এটা তার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই করতে পারবেন, করেন। সর্বময় ক্ষমতার মালিক তিনি। এটা পাবলিক পারসেপশন।'
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জিএম সিরাজ অনুরোধ জানিয়ে আরও বলেন, 'মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে দু-একদিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশ পাঠানো হোক। না হলে কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার সারাজীবন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।'
তার এই মন্তব্যের পর সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করলে স্পিকার তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
জিএম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'আইনের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। মানবিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত রেখে ৬ মাস পরে বাড়ানো হয়েছে।'
বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়ার বিধান আইনে নেই মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, 'আমি তো দেখিয়েছি, যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নেই। ওনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলে তো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নেই, ওনারও দেখাতে পারবেন না। বিবেচনার প্রশ্ন আসে না।'
আইনমন্ত্রী বলেন, '২০০৭-০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয়েছে, এটা অসত্য। প্রধানমন্ত্রী কখনো সাজাপ্রাপ্ত হননি। আসম আবদুর রবকে যখন পাঠানো হয়েছিল তখন দেশে ছিল মার্শাল ল। মাশাল ল'র ধারা ফৌজদারী কার্যবিধির ধারার সঙ্গে চলে না। ওনারা যথেচ্ছা করেছেন।'
'আজকে আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছা করতে পারি না। এটা হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা,' যোগ করেন তিনি।
Comments