বাংলাদেশ

মাদক সংক্রান্ত অপরাধে পুলিশ জড়িত থাকার খবর অনভিপ্রেত: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘দেশের তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মচারীরাও এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যা খুবই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।’
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিস লাইনে 'পুলিশ সপ্তাহ ২০২২' উপলক্ষে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, 'দেশের তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মচারীরাও এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যা খুবই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।'

মাদকে জড়িতদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, 'যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। পুলিশকে এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।'

পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণে এসব কথা বলেছেন।

পুলিশের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে এগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের পর্যায়ে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন বিদেশি পুলিশ কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে এসে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হন।'

রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আত্তীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশকে সমৃদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, এজন্য বাংলাদেশ পুলিশে একটি থিংক ট্যাঙ্ক থাকা প্রয়োজন। এ থিংক ট্যাংক বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম ও তদন্তে বৈজ্ঞানিক কৌশলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কার্যক্রমে উৎকর্ষ সাধনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, বিকাশমান প্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ অতি দ্রুত বাড়ছে। সাইবার অপরাধীরা দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এ ধরনের অপরাধ করছে, যা দমন করা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

জঙ্গি দমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জঙ্গি দমন বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম প্রধান সাফল্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, অনলাইন জিডি, ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন ইত্যাদি সেবা জনগণ দ্রুত পাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষও তাদের জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ এ কল করে দ্রুততম সময়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেন। ৯৯৯ সার্ভিসের উন্নয়নে এর কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার প্রয়োগ খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েই আইনি সেবা পেতে পুলিশের কাছে আসে। আপনারা এসব বিপদাপন্ন মানুষের সমস্যা ও অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, তাদেরকে আন্তরিকতার সাথে আইনি সেবা দিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন 'তোমরা জনগণের পুলিশ'। আপনারা প্রকৃত অর্থে জনগণের  পুলিশ হওয়ার লক্ষ্যে 'বন্ধু' হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়াবেন, মানবিক পুলিশ হবেন। জনগণকে সেবা প্রদান এবং তাদের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন প্রান্তে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগ প্রান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Army now has public trust as it stands by the people: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today said the country's army has earned public trust and confidence by standing beside the people

41m ago