জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও নেওয়া যাবে টিকা

যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারাও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অন্যান্য অস্থায়ী কেন্দ্র থেকে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের মতো অন্য যেকোনো পরিচয় পত্র।
কড়াইলের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে স্থাপিত টিকাদান কেন্দ্রে বিপুল উৎসাহে টিকা নিচ্ছেন বাসিন্দারা। ছবি: এমরান হোসেন

যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারাও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অন্যান্য অস্থায়ী কেন্দ্র থেকে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের মতো অন্য যেকোনো পরিচয় পত্র।

শুধু তাই নয়, স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পরিচয় সনদ নিয়েও টিকা নেওয়া যাবে ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া চলমান।

সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে টিকা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আবশ্যক। তবে, গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দারা এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েছেন।

সরকার সম্প্রতি টিকাদান কর্মসূচীকে গতিশীল করে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কিছু নিয়ম শিথিল করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা টিকাদান কর্মসূচির আওতা বাড়াতে চাই। অনেকেই সুরক্ষা অ্যাপ দিয়ে নিবন্ধন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য উপযোগী মানুষ যেকোনো ধরনের পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে গেলেই টিকা দিতে পারবেন।'

তিনি জানান, যাদের এনআইডি নেই তাদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টকে বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শামসুল আরও বলেন, 'এ ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার পর একটি অস্থায়ী ভ্যাকসিন কার্ড দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন সনদ পেতে হলে তাকে এনআইডি সংগ্রহ করে স্বাভাবিক নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।'

তিনি যোগ করেন, যাদের এনআইডি কার্ড নেই, তারা নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, 'তারা দেশজুড়ে বিস্তৃত কমিউনিটি ক্লিনিক এবং অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।'

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, 'আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। সব কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যাতে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। পল্লী অঞ্চলের মানুষ এখনো ভ্যাকসিন নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। তাই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো তাদেরকে টিকাদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করবে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, তারা ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিককে কাজে লাগিয়ে ১ দিনে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছেন।

মন্ত্রী বলেন, 'আমরা ১ মাসে ৩ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছি। আশা করছি এর চেয়েও বেশি অর্জন করবো।'

সরকার টিকাদান কর্মসূচীকে গতিশীল করতে এ মাস থেকে দৈনিক ১০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভ্যাকসিনের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কারণে এ ধরনের উদ্যোগগুলো সাফল্যের মুখ দেখছে।

এর আগে, দৈনিক গড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ টিকা পাচ্ছিলেন।

টিকাদানের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে শামসুল হক বলেন, 'গত ১৫ দিনে আমরা প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ মানুষকে টিকা দিয়েছি।'

তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, আগামী বছরের এপ্রিলের শেষ নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ৯ কোটি ডোজ টিকা এসেছে। মোট ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ২টি ডোজই পেয়েছেন। ১৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী টিকা পাওয়ার উপযোগী জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ ২ ডোজ টিকা পেয়েছেন।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু হলেও টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ব্যবধানের কারণে এই কর্মসূচি বারবার বিঘ্নিত হয়েছে।

মে মাসে চিহ্নিত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট জুন ও জুলাই মাসে দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর গত কয়েক মাসে ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ও সংক্রমণের হার কমে আসছে।

বুস্টার ডোজ

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল জানান, দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া হতে পারে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'যদি বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, আমরা তা অবশ্যই দিব। আমরা প্রথমে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কথা ভাববো। অন্যান্য দেশ কী করছে সেটাও আমরা অনুসরণ করবো।'

এই অনুষ্ঠানে সৌদি আরব বাংলাদেশের কাছে ১৫ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা হস্তান্তর করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি উপহার হিসেবে এই টিকা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী বস্তিবাসীদের টিকাদান কর্মসূচী গতকাল রাজধানীর কড়াইলে শুরু হয়েছে। বস্তিবাসীরা তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা পেয়েছেন।

কড়াইলের পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়ে স্থাপিত টিকাদান কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানকার বাসিন্দারা বিপুল উৎসাহে টিকা নিচ্ছেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

7h ago