সাত মসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধের আহ্বান

গাছ কাটলে ‘গাছের হন্তারক’ হবে সিটি করপোরেশন

‘তাহলে পরিকল্পনায় যে ভুল করেছিল তাকে ঢাকা সিটি করপোরেশন শাস্তি দিক,’
ছবি: সুচিস্মিতা তিথি/স্টার

রাজধানীর ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের আইল্যান্ডের গাছ কাটা বন্ধে আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা।

আজ বুধবার রাত ১০টার দিকে আবাহনী মাঠের পাশে সড়ক বিভাজনীতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'যে সিটি করপোরেশন গাছের মর্ম বোঝে না, গাছের মূল্য বোঝে না, সেই সিটি করপোরেশন আমাদের না। আমরা সেই সিটি করপোরেশনকে কখনোই নগর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেখতে চাই না, যারা গাছকে-গাছের প্রাণকে কোনোভাবে মূল্যায়ন না করে।'

ছবি: শরীফ এম শফিক/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'যদি সিটি করপোরেশনের যুক্তি হয় সৌন্দর্যবর্ধন; গাছের চেয়ে বেশি সুন্দর নগরকে আর কোনো কিছু করতে পারে না। এই ঢাকা শহরে তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে আর পাশের জেলা গাজীপুরে তাপমাত্রা ঢাকার চেয়ে ৩ ডিগ্রি কম থাকে। কারণ সেখানে সবুজের আচ্ছাদন আছে। এত বড় বড় গাছ তো আমরা লাগাইনি, ঢাকা সিটি করপোরেশনই লাগিয়েছে। আজকে কেন বলছে পরিকল্পনায় ভুল ছিল!'

'তাহলে পরিকল্পনায় যে ভুল করেছিল তাকে ঢাকা সিটি করপোরেশন শাস্তি দিক,' বলেন তিনি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'এই সড়ক দ্বীপটা যদি সিটি করপোরেশন প্রশস্ত করতে চায় তাহলে আরও বেশি মাটি পড়বে, গাছগুলো বেড়ে ওঠার আরও বেশি সুযোগ পাবে। প্রথমে গাছ লাগাবেন, তারপর বলবেন গাছগুলো বেশি বড়-উপযুক্ত না, আবার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করবেন—আপনাদের গাছের বাণিজ্য করার জন্য কেউ সিটি করপোরেশনে নিয়োগ দেয়নি। আপনারা জনগণের করের টাকায় চলেন। জনগণের কোনটা উপকার-কোনটা না সেটা বুঝতে হবে। জনগণ গাছ চায়, তাপ থেকে মুক্তি চায়। জনগণ এই শহরে পাখির ডাক শুনতে চায়। এই শহরে কি কেবল হর্ন শোনাবেন আপনারা আমাদের?'

ছবি: শরীফ এম শফিক/স্টার

আর একটি গাছও না কাটা এবং যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই জায়গায় অনতিবিলম্বে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'গাছ রেখেই সড়ক দ্বীপ প্রশস্ত করা যায়। গাছ কাটলে আপনারা গাছের হন্তারক বা গাছ হত্যা করেছেন সে হিসেবে জাতির সামনে চিহ্নিত হবেন।'

সিটি করপোরেশনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য নগরী বলা হয় ঢাকাকে। সেটাকে আরও অযোগ্য করে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় আপনারা নেমেছেন।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, 'যারা নগরের দায়িত্বে থাকেন, তাদের মূল দায়িত্ব যেন নগরবাসী স্বস্তিতে শান্তিতে নগরে বসবাস করতে পারে। এটার জন্য গাছের উপকারিতা আজ নতুন করে বলার অবকাশ নেই। মেয়রকে এটা নতুন করে মনে করাবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করতাম না। কিন্তু আজ আবার আমাদের সেই কথাগুলো বলতে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ইদানিংকালে যতগুলো গবেষণা হয়েছে, সেখানে যতগুলো সূচক আছে সেখানে ঢাকা শহর কীভাবে বাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে তা আমরা দেখেছি। প্রতিনিয়ত ঢাকার মান নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। মানুষ নিশ্বাস নিতে পারছে না। আমরা শব্দদূষণ, বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছি। আর আজ ঢাকা শহর একটা তাপীয় নগরে পরিণত হয়েছে। এর পেছনের কারণ আমাদের জলাশয় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, গাছ কাটা হচ্ছে।'

'নগর মানে তো কংক্রিটের ইমারত না। গাছ কাটা এখানে মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। এটা যারা করে, যাদের নির্দেশে করে, তাদের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। আজ মেয়রের কাছে আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন অবিলম্বে এই গাছ কাটা বন্ধের পরামর্শ দেন, তিনি যেন আমাদের সঙ্গে, পরিবেশবিদদের সঙ্গে বসেন,' যোগ করেন তিনি।

সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন অধিকারকর্মী খুশি কবির, গবেষক পাভেল পার্থ, লেখক ও গবেষক শরীফ জামিল, বাপার সাধারণ সম্পাদক অরূপ রাহী, লেখক মোস্তফা জামান, আর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম কিউরেটর আমিরুল রাজীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আদনান আজিজ, গ্রিন ভয়েজের সমন্বয়ক আলমগীর কবিরসহ অনেকে।

Comments