কক্সবাজারে আত্মসমর্পণকারী ১০১ ইয়াবা কারবারির মামলার রায় আজ

কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ৪ বছর আগে আত্মসমর্পণকারী ১০১ ইয়াবা কারবারির মামলা রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে।
আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের একাংশ। ছবি: স্টার

কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ৪ বছর আগে আত্মসমর্পণকারী ১০১ ইয়াবা কারবারির মামলা রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে।

গত ১৫ নভেম্বর মামলার সবশেষ জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মোহাম্মদ ইসমাইল এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

গত ১৫ নভেম্বর মামলার বিচার কাজ চলাকালীন মোট ১০১ জন আসামির মধ্যে ১৭ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। আদালত ওই ১৭ জনের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকী ৮৪ জন আসামিরও জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন আদালত।

মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেন। ১০২ জন আসামির মধ্যে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল (২৮) অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, কক্সবাজারের ৪ জন সংসদ সদস্য, তৎকালীন পুলিশ প্রধান ড. জাবেদ পাটোয়ারী ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গোলাম ফারুক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রস্তুতির পর ওই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল।

ইয়াবা কারবারিরা সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিনই আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পরিদর্শক এবিএমএস দোহাকে। মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে সকল আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালতে ১০১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামিদের পক্ষে আদালতে ২ জন সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। যারা সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলেন— টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর পুরানপাড়ার মাওলানা নাছির উদ্দিন ও মৃত খালেদা বেগমের ছেলে বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন এবং টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার মৃত মমতাজ উদ্দিনের পুত্র গিয়াস উদ্দিন ভুলু।

আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষা ফলাফল যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়াসহ মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আসামিদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সাবেক পিপি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ মামলা পরিচালনা করেন।

গত ১৫ নভেম্বর কারাগারে প্রেরণ করা ১৭ জন আসামি হলেন—নুরুল হুদা (৩৮), শাহ আলম (৩৫), আবদুর রহমান (৩০), ফরিদ আলম (৪২), মাহবুব আলম (৩৪), রশিদ আহমদ খুলু (৫৪), মো: তৈয়ব (৪৬), জাফর আলম (৩৭), মো. হাশেম প্রকাশ আংকু (৩৮), আবু তৈয়ব, (৩১), আলী নেওয়াজ (৩১), মো. আইয়ুব (৩৫), কামাল হোসেন (২৬), নুরুল বশর প্রকাশ কালাভাই (৪০), আবদুল করিম প্রকাশ করিম মাঝি (৪০), দিল মোহাম্মদ (৩৪) এবং মো. সাকের মিয়া (২৮)।

Comments