উচ্চ মাধ্যমিক পাস ‘হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ’ গ্রেপ্তার
'হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ' নুরুল ইসলাম (৫০) রোগী দেখতে ভিজিট নেন ৭০০ টাকা। বসেন নোয়াখালী শহরের নামিদামী হাসপাতালে। রোগী দেখার পাশাপাশি তিনি ইকো-কার্ডিওগ্রাফী পরীক্ষাও করতেন।
অথচ, উচ্চ মাধ্যমিক পাস এই 'বিশেষজ্ঞ' জীবনে কোনো দিন মেডিকেল কলেজের বারান্দায়ও পা রাখেননি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে নোয়াখালীর নাপিতের পুল এলাকার আমেরিকান স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে গণধোলাই দিয়ে নুরুল ইসলামকে পুলিশের কাছে তুলে দেন স্থানীয় অধিবাসী ও চিকিৎসকরা।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে সুধারাম মডেল থানা পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শনিবার রাত ১১টার দিকে মামলা করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টেনোগ্রাফার মো. গিয়াস উদ্দিন।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল ইসলাম নিজেকে ভুয়া চিকিৎসক বলে স্বীকার করেছেন।
নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল সরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. অনিক বিশ্বাস বলেন, 'বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের স্টাফ বোরহান উদ্দিনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তার সহযোগীতায় রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে পাস করা নুরুল ইসলাম নামের এক চিকিৎসকের নাম ও রেজিষ্ট্রেশন ব্যবহার করে তিনি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে যান।'
সুধারাম মডেল থানায় দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয় অভিযুক্ত নুরুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি জানান, জাল সনদ সংগ্রহ করে কক্সবাজার ও কুষ্টিয়াতে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। করোনা মহামারির সময় নোয়াখালীর বেসরকারি একটি হৃদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে তিনি আবেদন করেন। এরপর নোয়াখালীতে এসে দেখেন, ওই হাসপাতালের অবস্থা ভালো না এবং রোগীও তেমন নেই। এরপর শহরের এক উকিলের মাধ্যমে জেলা শহরের অন্যতম বড় বেসরকারি হাসপাতাল গুডহিল কমপ্লেক্সে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি ইকো-কার্ডিওগ্রাফী পরীক্ষা করে ভুয়া রিপোর্টও দিতেন।
নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. যিশু দাস বলেন, 'গ্রেপ্তার নুরুল ইসলাম কোনো চিকিৎসক না। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আরেকজনের সনদ ও রেজিষ্ট্রেশন ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার লেখা ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসার নমুনা দেখে স্থানীয় চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়।'
চিকিৎসকরা নুরুল ইসলামের প্রতারণার বিষয়টি হাতেনাতে ধরতে গতকাল সন্ধ্যার দিকে কল করে বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর ইকো করতে হবে। এ খবরে তিনি আমেরিকান স্পেশালাইজড হাসপাতালে এলে চিকিৎসকরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এ সময় তিনি তার জালিয়াতির কথা স্বীকার করে নেন।
বিষয়টি উপস্থিত চিকিৎসকরা সিভিল সার্জনকে কল করে জানালে তিনি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাঈমা নুসরাত জেবিনসহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন চিকিৎসককে সেখানে পাঠান।
সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। জেলায় ভুয়া চিকিৎসক চিহ্নিত করতে খুব শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নুরুল ইসলামকে রোববার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
Comments