নির্বাচন নিয়ে সরকারের চাপ নেই, চাপ দিলে পদত্যাগ করব: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ দেওয়া হলে তিনি তার পদে থাকবেন না।
তিনি বলেন, 'এই সরকার নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চাপ দেয়নি। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই। যেদিন সরকার চাইবে হুকুমমতো কাজ করাতে আমাকে এই চেয়ারে দেখবেন না আপনারা। সেই গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।'
এছাড়াও নির্বাচনকে সামনে রেখে যে কোনো ধরনের অনিয়ম কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও জানান সিইসি।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন ভবনে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'নির্বাচন হবে কি হবে না, এ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের ভেতর আমরা যেতে চাই না। প্রধান উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যেতে চাই। প্রধান উপদেষ্টার চিঠি পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগে যাতে নির্বাচন হয় তার জোর প্রস্তুতি চলছে।
তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়ে গেছে। ভোটের জন্য কেনাকাটা এগিয়ে চলছে। সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছি। আগামী রোববার থেকে নির্বাচনী সীমানার শুনানি শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি চলবে।
সিইসি বলেন, জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপার যারা এর আগে এ ধরনের কাজে যারা ছিল তাদের পদায়নের চিন্তা নেই।
ভোট আসতে আসতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও আশা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'কোন রাজনৈতিক বিতর্কে আমরা যেতে চাই না, রাজনৈতিক দলে প্রভাবিত নই। সংসদ নির্বাচন সঠিক করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমি এর মধ্যে ঢুকতে চাই না। যদি আইন পরিবর্তন হয় তাহলে হবে।'
তিনি বলেন, যারা স্বপ্রনোদিত হয়ে বিগত নির্বাচনে অনিয়ম করেছিল, সেই সব নির্বাচন কর্মকর্তাদের রাখা হবে না।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সিইসি বলেন, 'দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। তারা ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখে নাই। এবার ফাঁদ দেখবে তারা, যারা মনে করবে কেন্দ্র দখল করে জিতব, বাক্স দখল করে জিতব। সেই সুযোগ ইনশাল্লাহ তারা পাবে না। এখানে আমরা দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এবং আপনাদেরকে (গণমাধ্যমকর্মী) সাথে নিয়ে আমরা এই কাজটা সারব ইনশাল্লাহ।'
'আমরা সেভাবেই কাজ করছি। প্রত্যেক অফিসারকে সেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছি। আগে যে ধরনের হুকুম যেত, আমাদের হুকুম যাবে অ্যাজ পার ল, আমাদের হুকুম যাবে অ্যাজ পার রুল। একদম নিরপেক্ষভাবে যাতে আমাদের অফিসাররা কাজ করে, সেই নির্দেশনা থাকবে। অন্যায় কোনো হুকুম আমাদের তরফ থেকে যাবে না। অন্যায় কোনো আবদার আমরা কারও কাছ থেকে শুনব না,' বলেন সিইসি।
অবৈধ অস্ত্রধারীদেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে সিইসি বলেন, 'অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান এখনও চলছে, ভোটের আগে জোরেশোরে চলবে। যারা অস্ত্রবাজি করার নিয়ত করেছেন, আপনাদের জন্য অত্যন্ত দুঃসংবাদ। যারা অস্ত্রবাজি করে ভোটে জিততে চাইবেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলবে।'
তিনি বলেন, 'আপনারা যতটুকু চিন্তা করছেন, তার চেয়ে বেশি সজাগ আছি আমরা। কর্তার ইচ্ছায় কীর্ত্তন করে তো তারা দেখেছে কর্তা কোন দিকে যায়। আমাদের অফিসাররা জানে যে, এখনকার নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষপাতিত্ব করছে না। তারা আইন অনুযায়ী নিউট্রালি কাজ করতে চায়। আগে করেছে, যেহেতু আগের নির্বাচন কমিশন থেকে অনেকে চেয়েছে, আগের সরকার চেয়েছে। আমাদের তো সে রকম কোনো সমস্যা নেই।'
সিইসি বলেন, 'আমরা এবার সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগে যে স্ট্রাইকিং ফোর্স ছিল, উইদ আউট স্ট্রাইক। প্রয়োজনের সময় নাম দিয়েছিল স্ট্রাইকিং ফোর্স। আগে আমরা তিনটা নির্বাচনে দেখেছি দে নেভার স্ট্রাইক, দেখানোর জন্য করেছে। কিন্তু এবার স্ট্রাইক করা হবে। আমাদের সেনাবাহিনী যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে উদ্যোগ নিয়েছি। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, সবাইকে আমরা ইনভলভ করব। সব বাহিনী সম্পৃক্ত থাকবে।'
ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উইল নট বি এ প্রবলেম। সরকার এই ক্ষেত্রে খুব সজাগ আছে। সরকারের যে সমস্ত এজেন্সি ও বিভাগ ইলেকশনের সঙ্গে জড়িত থাকবে, প্রধান উপদেষ্টা তাদেরকে সমস্ত প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য।'
ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ প্রসঙ্গে এ এম এম নাসির উদ্দিন 'নির্বাচনে সব দল আসবে কি না, সেটা তো সময় বলে দেবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মঙ্গল চায়। এন্ড অব দ্য ডে, আমাদের দলগুলো একটা অবস্থানে আসবে। আওয়ামী লীগের তো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত। বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের রায় কি আসে সেটা আমাদের দেখতে হবে। সে পর্যন্ত তো তারা রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারবে না।'
সেখানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতিবিনিময় করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
Comments