‘৮ ঘণ্টা কাজ করে এক লিটার পেট্রোলের দামও পাই না’

‘রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে চা বাগানে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজ করে এক লিটার পেট্রোলের দামও পাইনা। সবকিছুর দাম বাড়ে শুধু আমাদের মজুরি বাড়ে না। প্রায়ই উপোস থাকতে হয়…’ বলছিলেন চা শ্রমিক কলতি রবিদাস।
কর্মবিরতি
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

'রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে চা বাগানে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজ করে এক লিটার পেট্রোলের দামও পাইনা। সবকিছুর দাম বাড়ে শুধু আমাদের মজুরি বাড়ে না। প্রায়ই উপোস থাকতে হয়…' বলছিলেন চা শ্রমিক কলতি রবিদাস।

একই কথা জানিয়েছেন অন্তত ২০ জন চা শ্রমিক। দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আজ মঙ্গলবার প্রথম দিনের মতো বাংলাদেশের সবকটি বাগানের চা-শ্রমিকরা দু'ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন।

তারা বলেন, 'প্রত্যেকদিন কিছু না কিছুর দাম বাড়ছেই, বাড়ে না শুধু আমাদের মতো নিরীহ চা শ্রমিকদের মজুরি। কারও কাছে তো আমরা ভিক্ষা চাচ্ছি না। শুধু আমাদের কাজের মুল্যায়ন চাচ্ছি।'

চা শ্রমিক সুখিয়া কৈরি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামী বাজারে যেটাই কিনতে যায় সেটার নাকি দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু নগদ মজুরি বাড়েনি। দুই বছর আগে ১২০ টাকা ছিল এখনো সেটাই আছে। ২ কেজি চাল কিনলে ১২০ টাকার আর কিছুই থাকে না। ৫ জনের সংসার আমাদের। কোনোদিকে আমাদের আয় উপায় নেই। কী করবো বুঝতে পারি না।'

'এখন দোকানে এককাপ চা রং খাইলেও তো ১০টাকা দেওয়া লাগে। সেটা ৬ মাস আগে ছিল ৫ টাকা,' বলেন তিনি।

স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অন বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রি বুক-২০১৯ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪৭ জন। অস্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন ও চা-জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ১২৫ জন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যুনতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি অনেক দিনের। মালিকপক্ষ ইতোমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বাড়লে একজন শ্রমিকের মজুরি হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও তো হবে না।'

যোগাযোগ করলে চা বাগান মালিকদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্র্যাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং ফিনলে টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণের জন্য সরকার একটি মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা মজুরি বাড়ানোর কথাও বলেছি।'

'যেহেতু মজুরি বোর্ড কাজ করছে, সেহেতু হঠাৎ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি অযৌক্তিক,' বলেন তিনি।

সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (শেড)এর দেওয়া তথ্যমতে, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ) এবং বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) আলোচনার মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে।

স্বাধীন বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের জন্য প্রথম নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয় ১৯৮২ সালে, যা বিসিএসইউ এবং বিটিএ কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি অনুসারে মজুরি নির্ধারণ করে।

২০০৯ সালে গঠিত দ্বিতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৮ সালের ৩২ দশমিক ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করে।

সরকারি মধ্যস্থতা এবং বিসিএসইউ ও বিটিএ'র মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নগদ মজুরি বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন থেকে করা হয় ৬৯ টাকা।

২০১৫ সালের জুন থেকে 'এ' শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৫ টাকা, 'বি' শ্রেণির বাগানের জন্য ৮৩ টাকা এবং 'সি' শ্রেণির বাগানের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮২ টাকা।

বিসিএসইউ ও বিটিএ'র মধ্যে চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট (যা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক হয় 'এ' শ্রেণির বাগানর জন্য ১০২ টাকা, 'বি' শ্রেণির বাগানের জন্য ১০০ টাকা এবং 'সি' শ্রেণির বাগানের জন্য ৯৯ টাকা ।

বিসিএসইউ ও বিটিএ'র মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি সই হয় ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর (যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক হয় 'এ' শ্রেণির বাগানর জন্য ১২০ টাকা, 'বি' শ্রেণির বাগানের জন্য ১১৮ টাকা এবং 'সি' শ্রেণির বাগানের জন্য ১১৭ টাকা।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

13h ago