অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদনে ভুল সংশোধনের নিয়ম

অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলা অনেকটা কমে এসেছে। ঘরে বসেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবেদন ফি পরিশোধসহ পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়।
ই-পাসপোর্ট
ছবি: ফাইল ফটো

অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলা অনেকটা কমে এসেছে। ঘরে বসেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবেদন ফি পরিশোধসহ পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়।

সহজ ব্যাপার হলেও আবেদন ফর্মে তথ্য দেওয়ার সময় ভুল হচ্ছে কিনা এর প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত পাসপোর্ট ওয়েব ইন্টারফেস থেকেই দেওয়া হয়। তথ্যগুলোর পরিপূর্ণভাবে সঠিক হওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় আবেদনকারী নিজেকেই।

এই জায়গাটিতেই বিশেষ করে নতুনদের অনেকের তাড়াহুড়া বা অসাবধানতাবশত ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আজকের নিবন্ধে আলোচনা করা হবে ই-পাসপোর্ট আবেদনের সেই ভুলগুলোর সংশোধন নিয়ে।

জমা দেওয়ার আগে ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল ধরা পড়লে করণীয়

ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য অভিবাসন ও পাসপোর্ট অনুষদের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করলে আবেদনকারীর নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়। অ্যাকাউন্টটিতে আবেদনকারীর সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

আবেদনের মুহূর্তে অনলাইন আবেদনের ফর্মের প্রতিটি পেজ আলাদাভাবে সংরক্ষিত হয়। তাই আবেদনকারী পুরো আবেদনটি সম্পন্ন করে সাবমিট বাটনে ক্লিক না করেও তার অসমাপ্ত আবেদনটি নিজের অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।

চূড়ান্তভাবে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত আবেদনপত্রের যেকোনো ভুল আবেদনকারী যতবার ইচ্ছে ততবার সংশোধন করতে পারবেন।

একবার সাবমিট বাটনে প্রেস করে ফেলার পর আবেদনটি আর আগের মতো সংশোধনের উপায় থাকবে না। জমা দেওয়া আবেদনের তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনকারীকে সশরীরে তার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে। সেসময় জমা দেওয়া ই-পাসপোর্ট আবেদন সংশোধনের জন্য কী কী পদ্ধতি মেনে চলতে হবে চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।

জমা দেওয়ার পর ই-পাসপোর্ট আবেদনে ভুল চোখে পড়লে করণীয়

ই-পাসপোর্ট আবেদন পরিপূর্ণভাবে শেষ করে তা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করার পর দেখা গেল তাতে ছোট্ট একটি ভুল আছে। এ অবস্থায় মূলত ২ পদ্ধতিতে ভুল সংশোধনের চেষ্টা করা যেতে পারে।

(১) নিতান্ত উপেক্ষণীয় ভুলের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কম্পিউটার অপারেটরকে অনুরোধ করে ভুলটি সংশোধন করে নেওয়া যেতে পারে। ছোট ছোট ভুল নিয়ে তেমন সমস্যা সৃষ্টি হবে না। তবে বড় ভুল হলে পাসপোর্ট অফিস আবেদনই গ্রহণ করতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে অবলম্বন করতে হবে দ্বিতীয় উপায়।

(২) বড় ভুলটি সংশোধনের জন্যও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে দেখা যেতে পারে। যদি তিনি সংশোধন করে দেন তাহলে তো ভালোই, আর তা না হলে শেষ উপায় হচ্ছে আবেদনপত্র বাতিল করা। অতঃপর নতুন করে আবেদন ফরম পূরণ করা। চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার পদ্ধতি।

অনলাইনে জমা দেওয়া ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম

প্রক্রিয়াটির শুরু পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালক বরাবর দরখাস্ত লেখা দিয়ে। ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল বিষয়ের এই দরখাস্তে প্রথমেই নিজের নাম ও মা-বাবার নামের পর আবেদনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

এরপর দিতে হবে অনলাইনে নিবন্ধিত আবেদনের আইডি নম্বর। এটি পাওয়া যাবে আবেদনের পর অ্যাপ্লিকেশন সামারিতে, যার শুরু হয়েছে OID দিয়ে।

এরপর আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে আবেদনের যে অংশে ভুল হয়েছে তার কথা লিখতে হবে। এই মূল অংশগুলোর মাধ্যমে দরখাস্তটি শেষ করে এর সঙ্গে অনলাইন আবেদনের সেই অ্যাপ্লিকেশন সামারির প্রিন্ট করা কপিটি সংযুক্ত করে দিতে হবে।

এরপর কাগজগুলো নিয়ে সশরীরে গিয়ে জমা দিতে হবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।

অনলাইন থেকে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার পদ্ধতি

পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের জন্য দরখাস্ত জমা দেওয়ার দিনই আবেদনকারীর মোবাইলে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের বিষয়ে এসএমএস চলে আসবে। এবার আবেদনকারীকে পাসপোর্ট আবেদনের ওয়েবসাইটে তার নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের এসএমএস যেহেতু চলে এসেছে, সেহেতু অ্যাকাউন্টে আবেদনের অংশে লাল অক্ষরে স্ট্যাটাস ক্যানসেল দেখাবে। এরপরই থাকবে ডিলিট অপশন, যেটি প্রেস করার মাধ্যমে পুরো আবেদনটি নিজের অ্যাকাউন্ট তথা অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে। এরপর সঠিক তথ্য দিয়ে নতুন করে আবার ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদন করা যাবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল হতে প্রায়ই একটু সময় নিতে পারে। কখনো কখনো ২৪ ঘণ্টার মতো দীর্ঘ সময়ও লেগে যেতে পারে। আবেদন ডিলিট করার পরও প্রায় সময় নতুনভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায় না। মূলত পাসপোর্ট সার্ভারের ত্রুটির কারণে এরকমটা হয়ে থাকে।

এই সমস্যাগুলোর বেলায় বার বার চেষ্টা না করে একটু বেশি সময় অপেক্ষা করে চেষ্টা করতে হবে। এই সময়টি ৩ থেকে শুরু করে কখনো কখনো ৭ দিন লেগে যেতে পারে।

এই সময়ে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল হয়েছে কিনা তা নিয়মিত অনলাইনে যাচাই করা যেতে পারে। এর জন্য পাসপোর্ট আবেদনের ওয়েবসাইটের চেক স্ট্যাটাস মেন্যুতে যেতে হবে।

এরপর অনলাইন পাসপোর্ট আবেদনের অ্যাপ্লিকেশন সামারির সেই OID নম্বর অথবা অ্যাপ্লিকেশন আইডি অথবা ইমেইল আইডি ও জন্ম তারিখ দিয়ে আবেদনের বাতিলের ব্যাপারে জানা যাবে।

ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধের আগে আবেদনে ভুল ধরা পড়লে করণীয়

এ ধরনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমাটিকে খেয়াল রাখতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনটি অনলাইনে জমা দেওয়ার পর থেকে ২০০ কার্যদিবস বা ৬ মাস পর্যন্ত সময় থাকে টাকা জমা দেওয়ার।

এই সময়টি ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

৬ মাস পর পাসপোর্ট আবেদনটি এমনিতেই পাসপোর্ট অফিসের পাশাপাশি পাসপোর্ট সার্ভার থেকেও সরিয়ে ফেলা হয়। তাড়া না থাকলে ৬ মাস পর বাতিল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর নতুন করে আবেদন করা যেতে পারে।

জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো তাৎক্ষণিকভাবে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালকের কাছে আবেদনটি বাতিল করার জন্য দরখাস্ত করা। দরখাস্ত গ্রহণের পর থেকে একদিনের মধ্যেই আবেদনটি সার্ভার থেকে বাতিল হয়ে যায়।

কারিগরি জটিলতা থাকলে সর্বোচ্চ ৭ দিন লাগতে পারে। এসব নিয়মে ই-পাসপোর্ট আবেদনটি ডিলিট করে দেওয়া যায়।

ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধের পর আবেদনে ভুল ধরা পড়লে করণীয়

যারা ইতোমধ্যে আবেদনের সঙ্গে টাকাও জমা দিয়ে ফেলেছেন, তাদের আবেদনে কোনো ভুল বের হলেও একই নিয়মে পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আবেদন ফি বাতিল হয়ে যাবে না। তারা আগের আবেদনের সঙ্গে যে ব্যাংক রশিদ বা চালান দিয়েছিলেন, সেই একই রশিদ বা চালান নতুন পাসপোর্ট আবেদনের সময় জমা দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

আগের বার আবেদনে ই-পাসপোর্টের যে মেয়াদ, পৃষ্ঠা ও সরবরাহের ধরণ উল্লেখ করা হয়েছিল, এবারও তা অপরিবর্তিত রাখতে হবে। যেমন: আগেরবার আবেদনের সময় যদি মেয়াদ ১০ বছর এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৪ হয়, এবং সরবরাহের ধরণ রেগুলার হয়, তবে এবারের আবেদনের বেলাতেও তথ্যগুলো একই রাখতে হবে।

পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের পর নতুন করে আবেদন না করা হলে আগের আবেদনের জন্য ব্যাংকে জমা দেওয়া টাকা ফেরৎ পাওয়া যাবে না।

ই-পাসপোর্ট আবেদন ফির এই ব্যাংক রশিদ বা চালান ইস্যু করা হয় মূলত আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও নাম দিয়ে। এই চালানের মেয়াদ থাকে ৬ মাস; অর্থাৎ ৬ মাস পর আবেদন করলে নতুন করে আবেদন ফি দিতে হবে।

শেষাংশ

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল হলে প্রয়োজনীয় শর্তগুলো খেয়াল রেখে উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা সংশোধন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে অতিরিক্ত সময় ও শ্রম নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেতে অনলাইনে আবেদনের সময় চূড়ান্তভাবে সাবমিট বাটনে ক্লিক করার আগেই সাবধান হওয়া উচিত।

ইন্টারনেট পরিষেবার সহজলভ্যতার ও পাসপোর্ট আবেদন ডিজিটাল করার কারণে আবেদনের সময় অনেকটা বাঁচে। এরপরও নাগরিক জীবনের জন্য অতি দরকারি এই নথিটি তৈরি করার প্রাথমিক ধাপে যথেষ্ট সময় দেওয়া উচিত। এই ধাপে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে শত বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

Comments