উত্তরের পথে ভোগান্তিমুক্ত ঈদযাত্রার আশা, আছে আশঙ্কাও

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল ১২ কিলোমিটার যানজট ছিল। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে মহাসড়কে কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ছবি: স্টার

ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বেড়েছে উত্তরের জেলাগুলোর গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সংযোগ সড়কে। 

গতকাল সোমবারও এ মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার যানজটের। বৃষ্টি, চার লেন কাজে ধীরগতি ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণেই এ যানজট বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

এবারের ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও রাস্তার খানাখন্দ উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। উপরন্তু ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রতিকূল আবহাওয়াও ভেস্তে দিতে পারে সব পরিকল্পনা। 

বঙ্গবন্ধু সেতু সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত সেতু পারাপার হয়েছে মোট ২৫ হাজার ২৬৭টি যানবাহন। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ১৮ হাজার ৫০ টাকা।

সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচল করে উত্তরাঞ্চলের ১৬টিসহ মোট ২১টি জেলার যানবাহন। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হলেও ঈদের সময় তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ফলে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হয় ঘরে ফেরা মানুষ। 

ঈদে মহাসড়কটি যানজটমুক্ত রাখতে প্রতিবছরই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একই সময়ে অতিরিক্ত সংখ্যক গাড়ি সেতু পার হতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। 

এবারও ভোগান্তিমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে অতীতের অভিজ্ঞতাগুলো মাথায় রেখে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার আলাদা আলাদাভাবে পরিবহন মালিক-শ্রমিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। 

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও প্রয়োজনে ঈদের আগের পাঁচদিন বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব সংযোগ সড়কটি একমুখী (উত্তরমুখী) করে দেওয়ার এবং পশুবাহী ট্রাকসহ সেতু পার হয়ে আসা অন্যান্য ঢাকামুখী যানবাহনকে ভূঞাপুর লিংক রোড দিয়ে বাইপাস করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন থাকবে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। 

তবে ঢাকা-পাবনা রুটের বাসের চালক কবীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতবারের চেয়ে এবার বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের অবস্থা খারাপ। গরুবাহী ট্রাকগুলোও খুব ধীরে চলে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, যানজট হবেই।' 

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান ডেইলি স্টারকে জানান, রাস্তার যেসব অংশে খানাখন্দ রয়েছে সেগুলো মেরামত করতে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া, তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো কাজের জন্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাস্তায় থাকবেন। 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেতু কর্তৃপক্ষ যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গত রমজানের ঈদের মতো এ ঈদেও সেতু পারাপারে যানবাহনের জন্য চোদ্দটি এবং মোটরসাইকেলের জন্য চারটি টোল বুথ প্রস্তুত থাকবে। তবে পারাপার দ্রুততর করতে যানবাহনগুলোকে টোলের সমপরিমাণ খুচরো টাকা প্রস্তুত রাখতে হবে।'

তিনি জানান, সেতুর লেনের প্রশস্ততা মাত্র ৬ দশমিক ৩ মিটার হওয়ায় সেতুর ওপর কোনো গাড়ি বিকল বা দুর্ঘটনায় পতিত হলে রেকার ঢুকিয়ে সেটিকে সরাতে অনেক সময় লেগে যায়। এতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়। গত ঈদে গাড়ি দুর্ঘটনা ও বিকল হওয়ার যে ৮৩টি ঘটনা ঘটেছে তার ৬৭টিই ঘটেছে সেতুর ওপর। 

'এরপরও মাত্র একদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য সমস্যা হলেও, গত ঈদযাত্রা মোটামুটি নির্বিঘ্নই ছিল', বলেন তিনি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ডেইলি স্টারকে জানান, রাস্তায় দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। গত ঈদে যেসব যানবাহন বিকল হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ফিটনেস আছে এমন যানবাহনও ছিল। এ ধরনের ঘটনা কম ঘটলে আর আবহাওয়া প্রতিকূল না হলে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে এবারের ঈদযাত্রায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। 

পরিস্থিতি যাই হোক, ঈদে মানুষের ঘরে ফেরা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে বরাবরের মতো তিনি এবং জেলা পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাস্তায় থাকবেন জানান পুলিশ সুপার।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারে এবং কোরবানির পশুবাহী গাড়িগুলো যাতে সময়মত হাটে পৌঁছাতে পারে সেজন্য যাবতীয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ যার যার দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালনের চেষ্টা করছে।' 

    
 

Comments

The Daily Star  | English

US opens door to tariffs on pharma, semiconductors

The trade war is raising fears of an economic downturn as the dollar tumbles and investors dump US government bonds, normally considered a safe haven investment.

43m ago