আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি এতগুলো তাজা প্রাণ যাবে: প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলনে প্রাণহানি নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আন্দোলনের নামে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে ধ্বংসাত্মক কাজ ঘটেছে। অনেকগুলি প্রাণ ঝড়ে গেছে। আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি যে এসময় এধরনের একটা অবস্থার সৃষ্টি হবে। আর সেখানে এতগুলো তাজা প্রাণ যাবে।'

স্বজনহারার বেদনা নিয়ে আমি বেঁচে আছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি জানি একজন আপনজন হারালে কী কষ্ট হয়।'

আজ বুধবার দুপুর ১২টায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় তিনি বলেন, 'যে কোটা আমি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দিয়েছিলাম। হাইকোর্টের রায়ে সেটা আবার যখন পুনর্বার নিয়ে আসা হয় সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আপিল করি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়। আবার সেই কোটা ফিরে আসে, কোটা আর থাকবে না আমার জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটাই আবার কার্যকর হয়।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় সেসময় আন্দোলন করতে যেয়ে যেখানে আন্দোলনের প্রতিটি দাবি কিন্তু মেনে নেওয়া হয়েছিল। মূল দাবি কোটা সংস্কার আবার উচ্চ আদালতে আপিল বিভাগ থেকে রায়ও দিয়ে দেওয়া হয়।'

'কিন্তু তারপরেও এই আন্দোলনের নামে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে ধ্বংসাত্মক কাজ ঘটেছে। অনেকগুলি প্রাণ ঝড়ে গেছে। আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি এসময় এধরনের একটা অবস্থার সৃষ্টি হবে। আর সেখানে এতগুলো তাজা প্রাণ যাবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'স্বজনহারার বেদনা নিয়ে আমি বেঁচে আছি। আমি জানি একজন আপনজন হারালে কী কষ্ট হয়। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আমি আর রেহানা গোটা পরিবার ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি আমরা সবাইকে হারিয়ে আছি। তারপরও সে হারাবার বেদনা নিয়ে ফিরে এসেছিলাম বাংলাদেশে। যে বাংলাদেশে তখন আমার বাবার ঘাতকরা ক্ষমতায়। যুদ্ধাপরাধী, যারা আমাদের মা বোনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে তুলে দিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে লুটপাট করেছে। তারাই তখন ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। বিদেশে রিফিউজি হিসেবেই আমাদের থাকতে হয়েছে। আমার ছোটবোনের পাসপোর্টটাও যারা ক্ষমতায় ছিল দেয়নি। রিনিউ করতে দেয়নি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্বে যে বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে বিশ্ব সম্মানের সাথে দেখে সে বাংলাদেশে আবার রক্ত ঝরবে। আবার এ ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হবে আর মানুষের সেবা করবার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে মানুষ সেবা পায় সে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ আর সেই সাথে সাথে মানুষের জীবন নেওয়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে ছোট শিশুটি। কেন এই রক্তঝরা? আজকে যাদের আমরা হারিয়েছি আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। যারা আপনজন হারিয়েছে তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাই। আমি নিজে দেখেছি… কালকে একটা ছোট শিশুকে পর্যন্ত দেখলাম এটা অত্যন্ত কষ্টকর। আমি জানি না অপরাধটা কী ছিল আমাদের। যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনে নামে।'

 তিনি বলেন, 'এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপগুলো দেশের অর্জনকে নষ্ট করা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন। আমার কাছে ক্ষমতা তো ভোগের বস্তু না। আমি আয়েশ আরাম করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি বাংলাদেশটাকে একটু উন্নত করতে এবং সেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল। সে মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হলো সেটা বিচারের ভার আমি দেশবাসীর কাছে দিচ্ছি।'

'আমি জানি, বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি গুলি, বোমা—মিটিংয়ে বোমা পুঁতে রাখা সরাসরি গুলি, গ্রেনেড হামলা করে মারার চেষ্টা বহুবার আমাকে এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর। আমি তো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশের জন্য কাজ করতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে দায়ীদের হাত রেখে দেশকে মুক্ত করতে হবে,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটিয়ে একদিকে বাংলাদেশের উন্নয়নকে পেছনে ফেলা কতগুলি মায়ের কোল খালি করা। যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাই। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই আমরা জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারো দাবির অপেক্ষা আমরা রাখি না। আমি তার আগেই জুডিশিয়াল কমিটি করে দিয়ে আজকে আবার আমি নির্দেশ দিয়েছি আমরা একজন জজসাহেবকে দিয়ে করেছিলেন সেখনে আমি বলেছি আরও দুজন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তদন্তের পরিধি বাড়ানো। সেইসঙ্গে আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি যে আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সংস্থা আছে বিশেষ করে বিদেশে তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা। কারণ আমি জানি আমার কোনো ঘাটতি ছিল না। যারা বসে ছিল আমি বারবার তাদের দাবি মানা… দাবি মানব কী যেটা আমি করে দিয়েছি সেটাই তো এটা, তো আমারই করা ইস্যুটা তো আমারই। আপিল করা হয়েছে আপিল বিভাগে। তারপর এই যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পিছনে টেনে নেওয়ার এ চক্রান্তে যারা জড়িত সেটাও আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত। ওই ৭১ এ যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।'

তিনি বলেন, 'যেহেতু স্বজন হারিয়েছি, আমি জানি সে কষ্ট তাই আমি যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। স্থাপনা ধ্বংস করেছে, সেগুলো পুনর্গঠন করা যাবে কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো তো আমরা ফিরে পাবো না।'

Comments

The Daily Star  | English
Govt Guarantees To Loans of State Enterprises

Sovereign guarantee rules to be revised

The government plans to amend the existing sovereign guarantee guidelines to streamline the process and mitigate fiscal risks if public entities fail to make repayments on time, according to a finance ministry report.

13h ago