করদাতারা যেন রাজস্ব কর্মকর্তাদের দেখে আতঙ্কিত না হন: অর্থ উপদেষ্টা

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজস্ব খাত ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কারও করা হবে।’
জিনিসপত্রের দাম শিগগির কমবে: সালেহউদ্দিন আহমেদ
সালেহউদ্দিন আহমেদ | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

করদাতারা যাতে রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় ভয় না পান, তা নিশ্চিত করতে কর কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে অর্থ আইন ২০২৪-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, 'করদাতারা আপনাদের দেখলে যেন আতঙ্কিত না হন। হয়রানি থেকে বাঁচতে আয়কর কর্মকর্তাদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাদের আশ্বস্ত করুন, তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।'

সামনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, 'আমাদের সামনে তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজস্ব খাত ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কারও করা হবে। সরকার ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।'

কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির গুরুত্বের ওপরও জোর দেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, 'জাতীয় চাহিদা মেটাতে যতটুকু কর আদায় করা দরকার ততটুকু কর আদায় করুন, তবে সাধারণ নাগরিকদের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি না করে কর আদায় করুন। জনগণের কথা বলার সময় তাদের আশ্বস্ত করুন এবং তাদের স্বেচ্ছায় কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা উচিত।

ড. সালেহউদ্দিন আর্থিক খাত সংস্কারে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে কর কর্মকর্তাদের জরুরি সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য আরও স্বাবলম্বী হওয়া, যদিও এখনও অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ছয় সদস্যের একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠকে আগামী দিনগুলোর জন্য অর্থনৈতিক আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

'যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করতে পারে। আমরা এরই মধ্যে কর সংস্কারের কাজ শুরু করেছি এবং আমাদের কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি, যা কিছুটা আস্থা তৈরি করতে পারে।'

অগ্রগতির বিষয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুরু করাসহ আর্থিক সংস্কারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অপব্যয় হ্রাস এবং জনসাধারণের তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের মনোযোগের উপর জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, 'অনেকে মনে করেন, সরকার শুধু অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কর আদায় করে, কিন্তু এ ধরনের ব্যয় ন্যূনতম রাখাই আমাদের লক্ষ্য।'

অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন প্রয়োজনীয় বলে স্বীকার করেন ড. সালেহউদ্দিন।

তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে আমাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করব, তবে বৈদেশিক তহবিল এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা অপরিহার্য।'

তিনি বলেন, বৈদেশিক সাহায্যের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার বিরুদ্ধে তারা সতর্ক।

তিনি বলেন, 'একটা কথা আছে, আপনার হাতটা যদি আমার পকেটে থাকে, আমি ডান দিকে গেলে আপনিও যাবেন, আমি বায়ে গেলে আপনিও বায়ে যাবেন। সেটা কিন্তু হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি।'

বাংলাদেশের কর কাঠামোর ভারসাম্যহীনতার কথা তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন প্রত্যক্ষ করারোপের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, 'প্রত্যক্ষ কর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবুও ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের উপর উচ্চ নির্ভরতার তুলনায় আমাদের রাজস্বে এর অংশ তুলনামূলক কম, যা সবাইকে সমানভাবে প্রভাবিত করে।'

তিনি আরও উন্নত কর ব্যবস্থার আহ্বান জানান।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের আয়কর ব্যবস্থা কিছুটা পশ্চাদমুখী, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অধীনে থাকা সংস্থাগুলো বিশেষত বোঝা মনে করছে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ন্যায্যতা ও প্রদানের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে করারোপ করা হয়েছে।'

এনবিআর চেয়ারম্যান এম আবদুর রহমান খান ড. সালেহউদ্দিনের সংস্কারের আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করে সরকারি রাজস্বের কার্যকরভাবে ব্যবহার নিশ্চিতের উপর জোর দেন।

তিনি বলেন, 'মানুষ জানতে চায় যে তারা যে কর দেয় তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কি না। আমরা সেই পরিবর্তন দেখতে শুরু করেছি, তবে আমাদের ব্যয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।'

তিনি কর কর্মকর্তাদের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং কর আদায়ের সময় অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থেকে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'আমাদের আইন ও বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত, তবে আমাদের অবশ্যই করদাতা বৃদ্ধি সহজতর করতে হবে।'

বিশেষ করে অতিরিক্ত কর ব্যয়ের বিষয়টি মোকাবিলায় কর আইনের উল্লেখযোগ্য সংস্কারের আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। ঘাটতি পূরণে সরকারের অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো উচিত নয় উল্লেখ করেন তিনি বলেন, 'আমাদের অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় কর কাটা বন্ধ করতে হবে।'

ড. সালেহউদ্দিন ছাত্র ও জনসাধারণের দ্বারা পরিচালিত 'জুলাই বিপ্লব'-এর পর বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন পথ প্রণয়নের ঐতিহাসিক সুযোগের কথা তুলে ধরেন। অতীত চর্চা পেছনে ফেলে আমাদের অবশ্যই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দিকে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এম লুৎফুল আজিম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন কর নীতি নির্ধারণী সদস্য এ কে এম বদিউল আলম এবং কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ।

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago