পুরান ঢাকায় ৮ বছর ধরে পড়ে আছে ২০ তলা ‘ঢাকা টাওয়ার’

পুরান ঢাকার জনসন রোডের ধারে পড়ে আছে জেলা পরিষদের ২০ তলা ভবনটি। ছবি: স্টার

পুরান ঢাকার জনসন রোড এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে ২০তলা সরকারি ভবন 'ঢাকা টাওয়ার'। ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনটি গত আট বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

দোকান ও বাণিজ্যিক স্পেস ভাড়া দিয়ে আয়ের লক্ষ্যে ২০১১ সালে ঢাকা জেলা পরিষদের এই টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, ভবনের বাইরের কাঠামো তৈরি করতেই লেগে যায় ছয় বছর। তখন জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) থেকে প্রকল্পটির কোনো অনুমোদনই নেওয়া হয়নি। এমনকি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও ছিল না কোনো প্রশাসনিক ছাড়পত্র। আরও গুরুতর বিষয় হলো, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই মূল নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

এসব অনিয়ম প্রকাশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ। এর মধ্যে ঢাকা জেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ নথিও রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আমার জানামতে, এই ভবনের কোনো অনুমোদন নেই। তবে তারা যদি এখন যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন আবেদন জমা দেয় এবং ভবনটি ব্যবহারযোগ্য বলে মনে হয়, তাহলে আমরা বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারি।'

গত ১ জুলাই সরেজমিনে ভবনটি দেখতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। বাইরে থেকে দেখা যায়, অবহেলায় পড়ে থাকা ভবনটির দেয়ালে শ্যাওলা জমেছে।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, মোট নির্মাণ ব্যয়ের ৩০ শতাংশ মন্ত্রণালয় এবং বাকি ৭০ শতাংশ দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদের অগ্রিম পরিশোধ থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু এত বড় একটি প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। বিশেষ করে পুরান ঢাকার মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই সমীক্ষা অপরিহার্য ছিল।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা জানান, ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পের জন্য তাদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক হলেও, এই প্রকল্পের জন্য তা চাওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে এই প্রকল্পের বাজেট ১৬০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং এর পেছনে কী যুক্তি ছিল, তার কোনো সঠিক তথ্য নথিতে নেই।

সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভবনে দোকান বরাদ্দের জন্য অগ্রিম হিসেবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। এখন এই বিনিয়োগকারীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, আমার টাকা আটকে গেছে। এই ভবন আদৌ কখনো শেষ হবে কি না, জানি না।

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এ পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকা পেলেও তাদের এখনো প্রায় ৬৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এর মধ্যেই মূল নথি গায়েব হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেট এই নথি সরানোর সঙ্গে জড়িত। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তারা এ বিষয়ে জানেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ওই সময় ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি হাসিনা দৌলা।

ঢাকা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন খন্দকার প্রকল্পের নথি খোয়া যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ভবনটিকে দখল হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। আমরা এলজিইডি থেকে মূল নকশার একটি অনুলিপি সংগ্রহ করেছি এবং অনিয়ম তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করেছি।

তিনি আরও জানান, এলজিইডির এক সমীক্ষায় কিছু শর্তসাপেক্ষে ভবনটিকে ব্যবহারযোগ্য বলে জানানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

The life cycles of household brands

For many, these products are inseparable from personal memory

14h ago