রাজশাহীর প্রসিদ্ধ ছোট মাছ ধরতে গিয়ে বিপাকে জেলেরা

বাঁশপাতা, পিওলি বা পাতাসির মতো ছোট মাছের কদর কে না বোঝে। কিন্তু এই ছোট মাছগুলি পদ্মা নদীতে ধরতে গিয়ে রাজশাহীর জেলেরা যে জালগুলো ব্যবহার করে, সেগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘কারেন্ট জাল’ না হলেও, ছোট ফাঁসের জাল প্রয়োজন হয়।

বাঁশপাতা, পিওলি বা পাতাসির মতো ছোট মাছের কদর কে না বোঝে।

কিন্তু এই ছোট মাছগুলি পদ্মা নদীতে ধরতে গিয়ে রাজশাহীর জেলেরা যে জালগুলো ব্যবহার করে, সেগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘কারেন্ট জাল’ না হলেও, ছোট ফাঁসের জাল প্রয়োজন হয়।

এতদিন নির্বিঘ্নে নদী থেকে ছোট মাছ ধরে আসলেও, এ বছর যখন থেকে রাজশাহীতে নৌ পুলিশ কার্যক্রম শুরু করেছে, জেলেরা পড়েছেন বিপাকে। তারা বলছেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে যখন পদ্মায় ভরা যৌবন আর নদী ছোট মাছে ভরা, তখন তাদেরকে গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। কারণ ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করায় জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১০ জন জেলেকে কারাগারে যেতে হয়েছে, তিন জন জরিমানা দিয়েছেন, ১.৩২ লাখ মিটারেরও বেশি জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলেরা অভিযোগ করেছেন, অক্টোবরের ৯ তারিখ থেকে ২২ দিনের ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই রাজশাহীর নৌ পুলিশ তাদেরকে মা মাছ রক্ষার অজুহাতে কোনো ছোট ফাঁসের জাল নিয়ে নদীতে নামতে দিচ্ছে না।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর অদূরে পবা উপজেলার নবগঙ্গায় নদীর ধারে এক জনসভায় তাদের এই অভিযোগগুলো উঠে আসে। সেদিন থেকেই পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে তারা নদীতে নামা বন্ধ রেখেছেন।

পবার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রিজভী আল হাসান মুন্জিল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জেলেরা বলেন, গোদাগাড়ীর গহমাবোনা থেকে বাঘার রাওথা পর্যন্ত পদ্মাপাড়ে বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার জেলে পরিবার প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা খরচ করে নদীতে নামেন, যেদিন মাছ পান সেদিন সর্বোচ্চ প্রায় ৭০০ টাকা রোজগার করতে পারেন। এভাবেই চলে তাদের জীবন।

কিন্তু, জেলেরা বলেন, ছোট মাছ ধরতে কী ধরনের জাল ব্যবহার করা যাবে তার কোন নির্দেশনা না দিয়েই নৌ পুলিশ তাদেরকে তাড়া করছে, জেলে পুরছে, জরিমানা আদায় করছে। এবং তাদের অতি কষ্টে কেনা জালগুলো, যেগুলোর বেশিরভাগই নিষিদ্ধ নয়, পুড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

জেলেদের এক নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, জালগুলো হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু জেলেরা যখন এগুলোর ব্যবহার করছেন তখনই কেবল ধরা হচ্ছে।

আরেক জেলে মিনারুল ইসলাম বলেছেন, এ অঞ্চলে প্রায় ২০ জনের মত প্রভাবশালী জেলে রয়েছেন যারা নিষিদ্ধ সব জাল ব্যবহার করলেও পুলিশ তাদের প্রতি নির্বিকার।

তিনি বলছিলেন, রাজশাহীর যেকোনো নামিদামি রেস্টুরেন্টে, পিওলি, পাবদা, পাতাসি, কাঁটা পাতাসি, বাঁশপাতা, টেংরা, বাচা, মেটরা বা খয়রা মাছ ছাড়া একদিনও চলবে না। “নদীতে ৫০ জাতেরও বেশি ছোট মাছ পাওয়া যায়। সেগুলো আমাদের ধরতে দিচ্ছে না, ঠিক আছে। কিন্তু তারপরও কিভাবে এ মাছগুলো বাজারে পাওয়া যায়? কারণ, পুলিশ কাউকে কাউকে এগুলো ধরতে দিচ্ছে। আর ছোট ফাঁসের জাল ছাড়া এই মাছ আটকানোও সম্ভব না।”

“পুলিশ আমাদের বলে দিক, আমরা সেই জাল দিয়েই ছোট মাছ ধরব,” যোগ করেন মিনারুল।

জেলেদের সভায় রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “আইন মানুষের জন্য। আমি পুলিশকে আহ্বান করছি এই জেলেদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন। নদী আর মাছ হারাতে থাকায় জেলেরা তাদের পেশা হারাতে বসেছেন, তাই তাদের রক্ষা করা জরুরি।”

তবে, রাজশাহী ও গোদাগাড়ীতে নৌ পুলিশের দুজন কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে আনা জেলেদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেছেন, তারা আইনের বাইরে কোনো কাজ করেননি। আইনে কারেন্ট জাল ছাড়াও নেট জাল,  বেড় জাল, জগৎ বেড় জাল, চরগড়া জাল ইত্যাদি প্রায় ১৬ ধরনের জাল যেগুলো আড়াই সেন্টিমিটার ফাঁসের নিচে সেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে মা-বাবা মাছ রক্ষা জন্যে, সেগুলোই তারা ধরছেন।

রাজশাহী নৌ পুলিশের পরিদর্শক মেহেদি মাসুদ বলেন, আমরা নতুন এই এলাকায় কাজ শুরু করেছি তাই কেউ কেউ আমাদের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন কোন কোন জেলেকে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। “কখনো কখনো, জেলেরা অন্য জেলের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের খবর দেন, সবার খবরের ওপর ভিত্তি করে আমরা সবসময় অভিযান চালাতে পারি না। সেজন্যই হয়ত ক্ষোভে কেউ এমন অভিযোগ করতে পারেন।”

তবে জেলেরা কোন জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরবে এ বিষয়ে নৌ পুলিশের কর্মকর্তারা কিছু জানাতে পারেননি। রাজশাহী মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন এ বিষয়ে তার কাজ করছেন।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের অধ্যাপক এবিএম মহসিন জানান যে, জেলেদের উচিত হবে ছোট মাছ ধরতে স্থানীয় যে কলাকৌশল আছে তাতে ফিরে যাওয়া।

“আগে ছোট মাছ ধরতে খরা জাল ব্যবহার হতো। জেলেরা সেটা ব্যবহার করতে পারে।”

তিনি বলেন, কারেন্ট বা সুতির মতো ক্ষতিকর জাল ব্যবহারে সকল আকারের মাছের অধিকাংশই ধরা পড়ে ফলে আপাত দৃষ্টিতে জেলেরা লাভবান হয় ঠিকই কিন্তু মা মাছের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় বছর বছর মোট মাছের পরিমাণ আরও কমে যায়। এই হারে কমতে থাকলে ১০-২০ বছর পর এসব মাছের পরিমাণ এমন মাত্রায় নেমে যাবে যে জেলারা নিজেরাই আর্থিক ক্ষতির কারণে অন্যে পেশায় চলে যেতে বাধ্য হবেন। এর পরিবর্তের জেলেরা যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব ক্ষতিকর জাল ব্যবহার না করে দেশি জাল ব্যবহার করেন তবে তারা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago