ফিরে দেখা ২০১৯: যে ঘটনায় হতবিহবল বাংলাদেশ
২৯ অক্টোবর ২০১৯। সম্ভব হলে ইতিহাসের পাতা থেকে দিনটি মুছে ফেলতে চাইত বাংলাদেশের ক্রিকেট। কিন্তু বাস্তবে তো আর তা হয় না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের গায়ে থাকবে অক্টোবরে লেগে থাকা কালি কিংবা ক্ষতও। যিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট তথা ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, সেই সাকিব আল হাসান এমন এক খবরে শিরোনাম হলেন, যা কখনো ভেবে কূল-কিনারা করতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ।
তিন তিনবার জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার দায়ে এদিনই শাস্তি ঘোষণা হয় সাকিবের। দুই বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ এক বছরের জন্য সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। তার একদিন আগেই অবশ্য দেশের গণমাধ্যমে চাউর হয়ে গিয়েছিল, এমন একটা ভীষণ খারাপ খবরের সামনে আছে বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান। এক যুগের বেশি যিনি দাপটের সঙ্গে খেলছেন বাংলাদেশ দলে। বিশ্ব ক্রিকেটে যিনি হয়ে উঠেছেন বড় এক নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেট নাম নিলেই যার ছবি আসে সবার আগে। তিনি এমন ভুল করলেন যা হজম করা শক্ত হয়ে গেল ক্রিকেটপ্রেমিদের। সাকিবের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানো বা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নেই বটে, তবে অধিকতর তদন্তে তেমন ভয়াবহ কিছুও বেরুত কিনা এই সংশয় যে দূর হয়নি।
সাধারণত জুয়াড়ির প্রস্তাব পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইসিসির দুর্নীতি বিভাগকে জানাতে হয়। এ সম্পর্কিত অসংখ্য সেশন করে সবটা জানেন সাকিব। তবু তিনি কিছুই জানাননি, এমনকি জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন! জুয়াড়ির প্রস্তাব সাকিব যেমন গ্রহণ করেননি, প্রত্যাখ্যান করেছেন এমন প্রমাণও মেলেনি। তাই নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে তার সাজা নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই। বরং কেবল এক বছর খেলার বাইরে থাকার সাজা পাওয়ায় সাকিব নিজেকে ভাগ্যবানই ভাবতে পারেন।
তবে এই এক বছরেই বাংলাদেশকে গুনতে হবে অনেক ক্ষতি। এই সময়ে বাংলাদেশের সামনে আছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অনেকগুলো টেস্ট। আছে প্রচুর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আছে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞা যখন শেষ হবে তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পুরোদমে চলবে। অর্থাৎ সেরা তারকাকে ছাড়াই পরবর্তী আইসিসি ইভেন্টে নামতে হবে বাংলাদেশকে। পারফর্মারের সংকটের সঙ্গে বাংলাদেশকে সামলাতে হবে নেতৃত্বের সংকটও।
এমন একটা ঘটনা তার ক্যারিয়ারে ঘটতে যাচ্ছে সাকিব জানতেন বেশ আগে থেকে। পুরো নথি প্রকাশের পর জানা যায় আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ বিশ্বকাপের আগে একবার সাকিবকে বাংলাদেশে এসে জেরা করে যায়। বিশ্বকাপের পর জেরা করে আরেক দফা। অর্থাৎ বিশাল একটা ধাক্কা পাওয়ার শঙ্কা নিয়েই খেলেছেন বিশ্বকাপ। এবং সেই বিশ্বকাপে সাকিব যা পারফর্ম করেছে তা এক কথায় অভাবনীয়। ছশোর উপর রান, ১১ উইকেট। তার অর্ধেক মানের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের আর কেউ করলে দল হিসেবে বিশ্বকাপে আরও বেশি কিছু পেতে পারত বাংলাদেশ।
Comments