ফিরে দেখা ২০১৯: অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম-মুশফিকরা
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী হিংসা, বিদ্বেষ ক্রমেই যেন বাড়ছে। বিশ্বের যে প্রান্তকে মনে করা হত শান্তির আরেক নাম সেখানেও ছড়িয়েছে বিদ্বেষের নেটওয়ার্ক। চলতি বছরের শুরুর দিকে তেমন এক ভয়াল বিদ্বেষের রূপ দেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিউজিল্যান্ড সফরে শেষ টেস্ট খেলার জন্য তখন ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেখানেই এক শুক্রবার মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা।
দিনটি ছিল ১৫ মার্চ, শুক্রবার। এমনিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনেকেই ধর্মপ্রাণ। বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়েও জুম্মাবারে নামাজ মিস হয় না তাদের। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট শুরুর আগের দিন তেমনি মসজিদের উদ্দেশে রওয়ানা দেন তামিমরা । কিন্তু স্থানীয় ওই মসজিদের কাছে পৌঁছাতেই আভাস পান ভয়াবহ খারাপ কিছুর।
সেটা যে কতটা খারাপ তখনো হয়ত আঁচ করেননি। এক উগ্র খৃষ্টান হামলাকারী দুই মসজিদে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে অন্তত ৪৯ জনকে হত্যা করে, হত্যার পুরো দৃশ্য আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভও করে সে। এক মসজিদে তার এই তাণ্ডবলীলার কবলে পড়তে পারতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। কাকতালীয় এক ঘটনা বাঁচিয়ে দেয় তাদের।
টেস্ট পূর্ববর্তী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে সেদিন লেগেছিল কিছুটা বাড়তি সময়, ওই সংবাদ সম্মেলনের পরে মসজিদের উদ্দেশে রওয়ানা হতে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের দেরি হয় খানিকক্ষণ।
তামিম, মুশফিকরা যখন মসজিদের সামনে পৌঁছেছেন তখন রক্তাক্ত শরীরের এক মহিলা বেরিয়ে এসে তাদের সতর্ক করেন ওদিকে না যাওয়ার জন্য। আর মিনিট পাঁচেক আগেও সেখানে পৌঁছালে সতর্ক বার্তা পেতেন না ক্রিকেটাররা, ঢুকে পড়তেন মসজিদে, পড়তেন নারকীয় গোলাগুলির মধ্যে।
ওই ঘটনার পর শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন সবাই, শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ড হয়ে পড়ে হতবিহবল। টেস্ট বাতিল হয়ে যায়, দেশে ফিরিয়ে আনা হয় ক্রিকেটারদের। বিশ্বব্যাপী মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে শুরু হয় নতুন আলাপ।
পুরো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিউজিল্যান্ড সরকারও নেয় দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়ে সকল বিদ্বেষের বিষ দূর করার চেষ্টা করেন সেদেশের সরকার প্রধান জাসিন্ডা আর্ডিন। সন্ত্রাসের মূলোৎপাটনে আসে দৃঢ় ঘোষণা, পদক্ষেপও নেওয়া হয় সেভাবে। তবে এই ভয়াল স্মৃতি নিশ্চিতভাবে অনেকদিন তাড়া করে ফিরবে তামিমদের।
Comments