ফিরে দেখা ২০১৯: জামালদের ঘিরে ফের অস্বস্তির চোরাকাঁটা
স্বস্তি ‘আসি আসি’ করেও যেন এলো না। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আরেকটি বছর ঝরে গেলেও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে ঘিরে অস্বস্তির চোরাকাঁটা থেকেই গেল।
বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে জায়গা করে নিয়ে নিরাশার অন্ধকার থেকে আশার আলোর দিকে শুরু হয়েছিল পথচলা। কিন্তু চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এসএ গেমসে জামাল ভূঁইয়ারা হোঁচট খেয়ে বলা চলে উল্টেই পড়েন।
তাই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৯২তম অবস্থানে থেকে বছর শুরু করা বাংলাদেশ পাঁচ ধাপ এগিয়ে ১৮৭ নম্বরে থেকে বছর শেষ করলেও তাতে আহ্লাদিত হওয়ার সুযোগ কোথায়!
নেপালের মাটিতে এসএ গেমস ফুটবলে অংশ নেয়নি ভারত। ফলে বাংলাদেশের সুবর্ণ সুযোগ ছিল স্বর্ণ জয়ের। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতাটিতে অনূর্ধ্ব-২৩ দল অংশ নিলেও তাদের প্রায় সবাই-ই আসলে জাতীয় দলের ফুটবলার। বাংলাদেশের প্রধান কোচ জেমি ডে’র আস্থা যে তারুণ্যে। কিন্তু, বছরজুড়ে উন্নতির ইঙ্গিত দেখানো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে চেপে বসে উল্টো-রথে। হেরে যায় ভুটান-নেপালের কাছেও। পাঁচ দলের মধ্যে তৃতীয় হয়ে পায় ব্রোঞ্জ পদক।
অথচ ইংলিশ কোচ ডে’র অধীনে বছরের শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। গেল মার্চে বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে কম্বোডিয়ার মাটি থেকে জয় নিয়ে ফিরেন জামাল-জীবনরা। জয়সূচক গোল করেন ২০ বছরের তরুণ ফরোয়ার্ড রবিউল ইসলাম।
এরপর সবচেয়ে বড় পরীক্ষাতেও পাস করে যায় বাংলাদেশ। এবারেও ত্রাতা সেই রবিউল। প্রাক-বাছাইয়ের দুই লেগ মিলিয়ে লাওসকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্ব নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। প্রথম পর্বে লাওসের মাটিতে জেতার পর দ্বিতীয় পর্বে ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ।
সামগ্রিক বিচারে, লাওসের বিপক্ষে রবিউলের লক্ষ্যভেদটি এ বছর বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ওই গোলের কল্যাণে বাছাইপর্বে কাতার-ওমানের মতো শক্তিশালী দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে বাংলাদেশ, পাচ্ছে ফিফা-এএফসি’র সূচিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চারটি দলই র্যাঙ্কিং-শক্তিতে এগিয়ে। গেল সেপ্টেম্বরে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আফগানিস্তানের কাছে হেরে শুরু। এরপর অক্টোবরে দুটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।
কাতারের কাছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২-০ ব্যবধানে হারলেও অদম্য মানসিকতা দেখানো ডে’র শিষ্যরা সিক্ত হয়েছিল প্রশংসায়। এরপর কলকাতার সল্ট লেকে খেলতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ভারতের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা।
তাই তো গেল ১৭ অক্টোবর ঝটিকা সফরে এসে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও বলেছিলেন, বাংলাদেশের ফুটবলের যে উন্নতি তার চোখে পড়েছে, তাতে তিনি যারপরনাই আনন্দিত।
উন্নতি-স্বপ্নের গাড়ি চলছিল ঠিক রাস্তাতেই। গেল নভেম্বরে বছরের শেষ বাছাই ম্যাচে র্যাঙ্কিংয়ে ১০০ ধাপ এগিয়ে থাকা ওমানের মাঠে ৪-১ গোলে হারলেও তাই হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু এসএ গেমসে ফের জোর ধাক্কা খেয়েছে সেই স্বপ্ন।
সবমিলিয়ে এ বছর নয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় চারটিতে। হার তিনটিতে। ড্র হয়েছে বাকি দুটি ম্যাচ। বাংলাদেশ গোল করেছে দশটি, হজম করেছে নয়টি।
Comments