একজন আক্রান্ত গড়ে ৫ থেকে ৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রাথমিক অবস্থার চাইতে প্রায় দ্বিগুণ বেশি শক্তিশালী হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, চীনের উহান শহরে প্রথম সংক্রমণের সময় ‘কোভিড-১৯’ যতখানি শক্তিশালী ছিল, বর্তমানে এটির সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
থাইল্যান্ডের একটি স্বর্ণের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ১৬ এপ্রিল ২০২০। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রাথমিক অবস্থার চাইতে প্রায় দ্বিগুণ বেশি শক্তিশালী হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, চীনের উহান শহরে প্রথম সংক্রমণের সময় ‘কোভিড-১৯’ যতখানি শক্তিশালী ছিল, বর্তমানে এটির সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে একজন করোনা আক্রান্ত দুই থেকে তিন জনের মধ্যে করোনা ছড়াতে পারতেন। প্রাথমিক সমীক্ষা থেকে এমনটাই ধারণা করেছিলেন এপিডেমিওলজিস্টরা।

চীনের বিরুদ্ধে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ ও তথ্য বিকৃতির অভিযোগ তুলে মার্কিন গবেষকরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে উহানে সংক্রমণের হার কম হলেও বছরের শুরু থেকে তা বাড়তে শুরু করে।

নিউ মেক্সিকোর লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির এক গবেষণা বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আগে উহানে একজন করোনা রোগী গড়ে পাঁচ থেকে ছয় জনের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারেন।

গত সপ্তাহে ‘ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ’ জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় চীনের হুবেই প্রদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ১৪০ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে উহান থেকে কত দ্রুত ভাইরাসটি অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে তা জানার চেষ্টা করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, চীনের অন্যান্য প্রদেশে আক্রান্তদের অধিকাংশই সরাসরি উহান থেকে গিয়েছিলেন কিংবা উহান ফেরত কারো সংস্পর্শে এসেছিলেন।

প্রধান দুই গবেষক স্টিভেন সানচি ও লিন ইয়েন-টিং জানান, প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে টেস্টিং কিটের স্বল্পতা, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের হারে পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অতিরিক্ত রোগী ভর্তির কারণে একজন রোগী প্রকৃত অর্থে কতজনের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

তবে, বিশ্বব্যাপী প্রকৃত আক্রান্তদের সংখ্যা ও ভ্যাকসিন বিতরণের কৌশল নির্ণয়ের জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এই সমীক্ষাগুলো প্রয়োজন।

মার্কিন গবেষকরা উহান ফেরতদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে মোবাইল ফোনের ডেটা সংগ্রহ করেন। সেই তথ্যের সঙ্গে মৃত্যুর হারের তুলনা করে গবেষকরা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।

চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান জর্জ গাওয়ের নেতৃত্বে জানুয়ারির শেষ দিকে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ের ৪২৫ জন আক্রান্তের উপর গবেষণা করা হয়েছিল। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, একজন কোভিড-১৯ রোগী গড়ে ২ দশমিক ২ জনকে আক্রান্ত করতে পারেন।

গত মাসে প্রকাশিত লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষণা বলছে, ব্রিটেনসহ ইউরোপের ১১টি দেশে একজন আক্রান্ত গড়ে তিন থেকে চার জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারেন।

গত মাসে তেহরানের পায়ামে নূর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ইরানে একজন করোনা রোগী গড়ে চার থেকে পাঁচ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।

২০০২-০৩ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসে প্রায় ৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। এ রোগে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮০০ মানুষ মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন সার্স আক্রান্ত গড়ে তিন জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল।

নিউ মেক্সিকোর ওই গবেষণাপত্রের প্রধান দুই লেখক স্টিভেন সানচি ও লিন ইয়েন-টিং বলেন, ‘সংক্রমণের মাত্রা কতটুকু তা জানা জরুরি। উচ্চস্তরে সংক্রমণ ঘটতে থাকলে উপসর্গহীন আক্রান্তরাও অনেক মানুষকে সংক্রমিত করবেন। সেক্ষেত্রে কেবল যাদের উপসর্গ আছে তাদেরকে কোয়ারেন্টিন করা কিংবা তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের খুঁজে বের করাই যথেষ্ট না। তখন সামাজিক দূরত্ব বাড়াতে হবে, আরও কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।’

তারা আরও জানান, যদি ২০ শতাংশ আক্রান্ত কীভাবে, কার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন তা জানা না যায় তাহলে উচ্চস্তরের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। মার্চ মাসে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণের হার কমেছে। হংকং, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই সেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো গেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Hasina sued over shop owner's death

Hasina's extradition: India to deal with govt thru diplomatic channel

India will handle the matter of ousted prime minister Sheikh Hasina's extradition with the Bangladesh government through diplomatic channels, stated Indian external affairs minister S Jaishankar

11m ago