লোকসানের আশঙ্কায় আরও কয়েকটি ব্যাংক

ব্যাংকের ব্যবসায় মন্দাবস্থা শুরু হয়েছে। সরকার ঘোষিত এক ডিজিটের সুদের হার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমতে শুরু করেছে। তার ওপর করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব এই সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ব্যাংক ব্যবসায় ভাটা কেবল শুরু। আগামীতে আরও কিছু ব্যাংক নতুন করে লোকসানে পড়তে পারে।
Bank_Loss.jpg
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংকের ব্যবসায় মন্দাবস্থা শুরু হয়েছে। সরকার ঘোষিত এক ডিজিটের সুদের হার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমতে শুরু করেছে। তার ওপর করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব এই সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ব্যাংক ব্যবসায় ভাটা কেবল শুরু। আগামীতে আরও কিছু ব্যাংক নতুন করে লোকসানে পড়তে পারে।

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৮টি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। আর কমেছে ১৮টির। দুটি ব্যাংক আগেই লোকসানে ছিল। তাদের লোকসানের পরিমাণ আরও বেড়েছে। আর দুটি ব্যাংকের তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্যাংকের মুনাফা টান পড়বে এটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ আমাদের দেওয়া সুদের হার হঠাৎ করে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলো। যদিও আমানতের সুদের হার আমরা হঠাৎ করে কমিয়ে দিতে পারিনি। বেশির ভাগ ব্যাংকেরই কিছু স্কিম আছে টাকা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব সম্বলিত, যেগুলোর সুদের হার কমানো সম্ভবও নয়।’

তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকের সুদের হারকে এক ডিজিটে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল। গত ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হয়েছে। এক অংকের সুদের হার বাস্তবায়নের চাপের ওপর যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব। আমাদের ঋণ দেওয়া ও টাকা ফেরত আসার পরিমাণ কমে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুনাফা কমতে শুরু করেছে।’

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের মুনাফায় মূল ধাক্কাটি এসেছে এক ডিজিটের সুদের হার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে। যা আরও খারাপ পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে করোনাভাইরাস। আমরা চাইলেও রাতারাতি আমানতের সুদের হার কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু সুদের হার হঠাৎ করেই কমাতে হয়েছে। একই সময়ে এলো মহামারি।’

‘এই মহামারির কারণে এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর কোনো ব্যবসাই হয়নি। এরপর কিছুটা ব্যবসা হতে শুরু করলেও তা খুবই কম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি নেওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতের তারল্য সহজলভ্য হবে, এতে এক ডিজিটের সুদের হারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে’— বলেন তিনি।

আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ ছয় মাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ব্যাংক রেট পাঁচ শতাংশ থেকে নামিয়ে চার শতাংশ করা হয়েছে। আর রেপো রেট পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে চার দশমিক ৭৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

মুদ্রানীতি নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা ঠিক যে এখন ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া টাকার খরচ কমবে। তবে ব্যাংকিং সেক্টরের মূল তহবিল আসে আমানত থেকে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের বাণিজ্য এবং আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। ফলে এলসি খোলাসহ নানা কমিশন থেকে ব্যাংকিং সেক্টরের যে আয় সেটিও এবার কমে গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দেশের রপ্তানি প্রায় ১৭ শতাংশ কমে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ঋণের কিস্তি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা ছাড় দিয়েছে। শ্রেণিকরণ করার ক্ষেত্রেও কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে এবার ব্যাংকগুলো বেঁচে গেছে। নয়তো আরও অনেক বেশি শ্রেণিকৃত ঋণ হতো, অনেক বেশি প্রভিশন রাখতে হতো। তখন ব্যাংকের মুনাফা আরও কমতো।’

‘বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে গত জানুয়ারি থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ কোনো গ্রাহককে শ্রেণিকৃত ঋণে পরিণত না করার নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ছয় মাস হবে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং যদি না তারা ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে পারে’— বলেন তিনি।

একটি তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্যাংকের মুনাফা কমার ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারও ভূমিকা রেখেছে। কারণ শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ থেকে আদোতে তেমন কোনো মুনাফাই আসেনি। পুঁজিবাজার দুই মাস বন্ধ থাকায় আমাদের টাকাও আটকে ছিল। সরকার ঘোষিত ছুটির কারণে ২৮ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল। আর পরের এক মাস বাজার চালু থাকলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় এক শতাংশ কমেছে।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যেহেতু আগামীতে সব প্রতিষ্ঠানকে আমানতের সুদের হার কমাতে হবে, তাই ছোট বা নতুন ব্যাংকগুলোর জন্য আমানত সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। মানুষ ভালো ব্যাংকেই আমানত রাখতে চাইবে। এমনিতেই মহামারির কারণে দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি ভালো নেই। ফলে অনেকেই ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। তার ওপর এক অংকের সুদের হার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফায় বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের পর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহকদের যখন শ্রেণিকরণ করতে হবে, তখন একসঙ্গে অনেক ঋণ শ্রেণিকরণ করতে হতে পারে। ফলে প্রভিশন বেড়ে যাবে। এতে নতুন করে অনেক ব্যাংক লোকসানে পড়বে।’

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago