তাম্রফলকে খোদিত ইতিহাসের অনাবিষ্কৃত অধ্যায়
১৯৫৮ সালে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের মাটির নিচে সন্ধান পাওয়া যায় ‘চন্দ্রপুরশাসন’ নামের একটি তাম্রশাসনের। পশ্চিমভাগ গ্রামে পাওয়া এ তাম্রশাসনটি পরবর্তীতে ‘পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন’ নামে পরিচিত হয় এবং এটি দশম ও একাদশ শতাব্দীতে বাংলা শাসন করা চন্দ্র বংশের উদ্ধার হওয়া ১২টি তাম্রশাসনের মধ্যে অন্যতম।
চন্দ্রবংশীয় এই ১২টি তাম্রশাসনের মধ্যে আটটি মহারাজা শ্রী-শ্রীচন্দ্র দেবের (রাজা শ্রীচন্দ্র) শাসনামলের এবং এর সবগুলোই মূলত ভূমিদানের তাম্রশাসন। এসব তাম্রশাসন সেসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী বা ব্যক্তিদের মধ্যে ভূমিদানের রাজকীয় আদেশ জারি করতে ব্যবহার করা হতো।
তবে, রাজা শ্রীচন্দ্রের অন্যসব তাম্রশাসনের মধ্যে পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে উল্লেখ রয়েছে দশম শতাব্দীতে শ্রীহট্টে চন্দ্রপুরে প্রতিষ্ঠিত এক প্রাচীন উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা।
গত ২৪ জুলাই দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘চন্দ্রপুর: যেখানে লুকিয়ে আছে দশম শতাব্দীর বিদ্যাপীঠ’—এ একজন গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয় যে, পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের বর্তমান অবস্থান অজানা।
সেদিনই দ্য ডেইলি স্টারের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সিলেটের প্রাচীনতম দৈনিক পত্রিকা যুগভেরীর সম্পাদক প্রয়াত আমিনুর রশীদ চৌধুরীর ছেলে হ্যারল্ড রশীদ।
এ তাম্রশাসনটি বর্তমানে সিলেটের ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন জাদুঘরে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও জাদুঘরে হস্তান্তরের আগে পর্যন্ত এটি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তাদের পরিবারেই সংরক্ষিত ছিল।
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের সন্ধান
তাম্রশাসনের প্রাপ্তিস্থান পশ্চিমভাগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক পরিদর্শনের সময় সে গ্রামের ৯০ বছর বয়সী পরেশ পাল দাবি করেন যে তিনি তার বাড়ির পাশে পুকুর খনন করার সময় এটির সন্ধান পান।
যদিও তাম্রশাসনটির প্রথম পাঠোদ্ধারকারী এবং ১৯৬৭ সালে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ বই ‘কপার-প্লেটস অব সিলেট’র লেখক কমলাকান্ত গুপ্ত তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে এটি ১৯৫৮ সালে পশ্চিমভাগ গ্রামের একটি পতিত ভূমি থেকে দুর্ঘটনাবশত খুঁজে পান বিনোদ বিহারী চক্রবর্তী নামের একজন।
পরবর্তীতে তিনি এটি পশ্চিমভাগের পাশের ভূমিউড়া গ্রামের পণ্ডিত শ্যামপদ কাব্যতীর্থ ভট্টাচার্যের কাছে দেন।
১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন ‘সিলেট হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি’র সদস্য ও দৈনিক যুগভেরী পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরী পণ্ডিত শ্যামপদ কাব্যতীর্থ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে তাম্রশাসনটি সংগ্রহ করেন।
আমিনুর রশীদ চৌধুরী ও সোসাইটির সহযোগিতায় ১৯৬১ সালে কমলাকান্ত গুপ্ত তাম্রশাসনটির পাঠোদ্ধার করেন এবং ১৯৬৭ সালে রশীদ চৌধুরীর প্রকাশনালয় ‘লিপিকা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ থেকে প্রকাশিত হয়।
এ বইয়ে কমলাকান্ত গুপ্ত উল্লেখ করেন যে তাম্রশাসনটি সোসাইটির জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন গবেষক এটির সন্ধান নিশ্চিত করতে পারেননি।
এমনকি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চন্দ্রপুরের প্রাচীন বিদ্যাপীঠের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করলেও নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি তাম্রশাসনটি কোথায় রয়েছে।
আমিনুর রশীদ চৌধুরীর ছেলে হ্যারল্ড রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোসাইটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে তাম্রশাসনটি তাদের বাড়িতেই সংরক্ষিত ছিল, কোথাও হারিয়ে যায়নি।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট এটি সিলেটের দরগাগেইট সংলগ্ন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ ভবনে স্থাপিত ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরে প্রদান করি এবং বর্তমানে এটি সেখানেই সংরক্ষিত রয়েছে’।
এ তাম্রশাসনের সঙ্গে কমলাকান্ত গুপ্তের বই ‘কপার-প্লেটস অব সিলেট’র মূল একটি কপিও জাদুঘরে প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইতিহাস যেখানে খোদিত
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার চন্দ্র রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রীচন্দ্রের ‘চন্দ্রপুরশাসন’ বা চন্দ্রপুর সংক্রান্ত রাজকীয় আদেশে শ্রীহট্ট (বর্তমানের সিলেট বিভাগ) এর চন্দ্রপুর বিষয়ে (জেলা) নয়টি মঠের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং মঠ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সাধারণ ব্যয় নির্বাহের জন্য ভূমিদান করা হয়েছে।
সহস্র বছর প্রাচীন এসব মঠে শিক্ষার্থীরা উপাধ্যায় বা অধ্যাপকদের কাছ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতেন।
এ ছাড়াও, শ্রীহট্টের মধ্যবর্তীস্থানে এক প্রাচীন নৌবন্দরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার নাম ইন্দেশ্বর নৌকাবান্ধা (ইন্দেশ্বর নৌ বন্দর)। আর এ নৌবন্দরের জন্য দান করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ছয় শ একর জায়গা।
এ তাম্রশাসনেই চন্দ্রপুর বিষয়ের বাকি সমুদয় ভূমি দান করা হয়েছে গার্গ ও অন্যান্য ছয় হাজার ব্রাহ্মণের মাঝে সমানভাগে।
অর্থাৎ, বৌদ্ধধর্মীয় রাজা শ্রীচন্দ্র তার চন্দ্রপুর বিষয়ের সম্পূর্ণই দান করেছেন ব্রাহ্মণ্য চর্চায় এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে। যেটি সেসময়কার বৌদ্ধধর্মীয় অন্যান্য রাজাদের দান থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম বলে অভিহিত করেছেন কমলাকান্ত গুপ্ত।
তাম্রশাসনে রাজার সিল বা চিহ্ন খোদাই করা থাকে এবং এগুলো রাজকীয় আদেশ হিসেবেই বিবেচিত হয়। সেসময় রাজারা সাধারণত তাম্রশাসনের মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ প্রদান করতেন।
দশম শতাব্দীতে তৎকালীন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় চন্দ্রবংশীয় শাসনামলের শুরু রাজা ত্রিলোক্যচন্দ্রের হাত ধরে এবং তারপর এ রাজ্য শাসন করেন তার পুত্র রাজা শ্রীচন্দ্র। এ রাজ্যের রাজধানী বর্তমানের মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে ছিল।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুল মোমিন চৌধুরী তার ‘ডাইন্যাস্টিক হিস্ট্রি অব বেঙ্গল’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে রাজা শ্রীচন্দ্র ৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৪৫ বছর এ রাজ্য শাসন করেন, যা পাঁচ প্রজন্মের এ চন্দ্রবংশীয় শাসনামলের মধ্যে দীর্ঘতম।
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের বর্ণনায় কমলাকান্ত গুপ্ত তার বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘একটি ১৭ দশমিক ৫ ইঞ্চি বাই ১২ ইঞ্চির তাম্রফলকে খোদিত। যার উপরের অংশের মাঝে একটি সিল (চিহ্ন) রয়েছে। সিলটি মূল প্লেটের মাঝ বরাবর পাঁচ ইঞ্চির মতো অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো এবং সামনের ও পেছনের অংশের দুটি করে লাইনের মধ্যে ছেদ সৃষ্টি করেছে’।
‘উপরের সিলটি মূলত ধর্মচক্রমুদ্রা অথবা আইনের চাকার প্রতীক। এতে বেশ কয়েকটি বৃত্ত খোদিত, চাকার দুইপাশে দুইটি মৃগ (হরিণ)। যা মূলত গৌতম বুদ্ধের মৃগয়ার সময় প্রথম আইনের চাকারস্বরূপ প্রকাশকে চিহ্নিত করছে। তার নিচে রাজা শ্রী-শ্রীচন্দ্র দেবের (রাজা শ্রীচন্দ্র) নামের চিহ্ন রয়েছে।’
কমলাকান্ত গুপ্ত লিখেছেন, ‘সিলসহ তাম্রশাসনটি প্রায় ২৪ পাউন্ড এবং এতে মোট ৬৫টি লাইন খোদিত রয়েছে। এর মধ্যে সামনের অংশে ২৮ লাইন এবং পিছনে ৩৭ লাইন। এর বর্ণমালা এর ধরনের উত্তরবঙ্গীয় নাগরী (যা পরবর্তীতে সিলেটি নাগরী হিসেবে পরিচিত হয়েছে) এবং এর ভাষা সংস্কৃত’।
কী খোদিত এ তাম্রশাসন?
রাজা শ্রীচন্দ্র তার শাসনের পঞ্চম বর্ষে এ তাম্রশাসন জারি করেন বলে এতে উল্লেখ রয়েছে। যা ইতিহাসবিদদের মধ্যে ৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ।
এ তাম্রশাসনে গৌতম বুদ্ধের বন্দনা, এ তাম্রশাসনের কারণ উল্লেখ করে রাজা শ্রীচন্দ্রের পারিবারিক পরিচয়, তার পিতা মহারাজা ত্রিলোক্যচন্দ্রের যুদ্ধযাত্রা ও বিজয়গাঁথা, শ্রীচন্দ্রের রাজপারিষদদের নাম (যাদেরকে সাক্ষী রেখে এ তাম্রশাসনটি জারি করা) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
তবে, এ তাম্রশাসনটি মূলত ভূমিদানের আদেশ আর কমলাকান্ত গুপ্তের পাঠোদ্ধার অনুযায়ী রাজা শ্রীচন্দ্র পুণ্ড্রবর্ধণভূক্তির (প্রদেশ) অধীন শ্রীহট্ট মণ্ডলের (বিভাগ) চন্দ্রপুর, গরলা ও পোগারা বিষয়ের (জেলা বা মহকুমা) সব ভূমি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দান করে দেন।
এর মধ্যে চন্দ্রপুর বিষয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বাকি দুটি বিষয় ক্ষুদ্রায়তন বিবেচনায় তাম্রশাসনটিকে ‘চন্দ্রপুরশাসন’ হিসেবেই অভিহিত করা হয়েছে। এ তাম্রশাসনে প্রথম ১২০ পাটক (১ পাটক সমান ৫০ একর) ভূমি দান করা হয় চন্দ্রপুর মঠের (চন্দ্রপুরের মঠ) উদ্দেশ্যে।
যার মধ্যে ১০ পাটক ভূমি দান করা হয় এ মঠের উপাধ্যায়কে। যিনি চন্দ্রগোমী (প্রাচীন বঙ্গের একজন পণ্ডিত ও সংস্কৃত বৈয়াকরণ) ব্যাকরণের একজন শিক্ষক। এ ছাড়াও, ১০জন শিক্ষার্থী ও পাঁচ জন ব্রাহ্মণের ব্যয় নির্বাহ ছাড়াও মন্দিরের স্থপতিসহ মঠের সঙ্গে জড়িত নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য বিভিন্ন মাপে ভূমিদান করা হয়।
এরপর আরও ২৮০ পাটক ভূমি দান করা হয় অন্য আটটি মঠের উদ্দেশ্যে। যার মধ্যে চারটি দেশান্তরীয় মঠ ও চারটি বাঙ্গালা মঠ। এসব মঠের প্রতিটিতে একজন করে বেদজ্ঞ উপাধ্যায় বা অধ্যাপকের জন্য ১০ পাটক করে ভূমিদান ছাড়াও শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ভূমিদান করা হয়।
এসব ভূমি ছাড়াও আরও ৫২ পাটক ভূমি দান করা হয় ইন্দেশ্বর নৌকাবান্ধার (ইন্দেশ্বর নৌ বন্দর) জন্য।
এই ৪৫২ পাটক ভূমি ছাড়া চন্দ্রপুর এবং বাকি দুটি ক্ষুদ্র বিষয়ের সকল ভূমি স্থানীয় ব্রাহ্মণ গার্গ এবং অন্য আরও ছয় হাজার ব্রাহ্মণের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।
যদিও ভূমিদানের উদ্দেশ্যে এই তাম্রশাসনটি জারি করেছিলেন রাজা শ্রীচন্দ্র, তবে এতে চন্দ্র বংশ, ইতিহাস, ভূতত্ত্ব, ভূমিব্যবস্থা, ধর্ম, জীবনাচরণ, ভাষা ও অন্য নানা দিকের তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।
শ্রীচন্দ্রের এ তাম্রশাসন এবং অন্য সব তাম্রশাসনে ইতিহাসবিদরা এটুকু নিশ্চিত হয়েছিলেন যে শ্রীচন্দ্রের পিতা মহারাজা ত্রিলোক্যচন্দ্র উত্তর-পূর্ব ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন কামরূপ রাজ্য (বর্তমান ভারতের আসাম প্রদেশে) জয় করে তার রাজত্ব হিমালয় পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন।
চন্দ্রপুর কোথায়?
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন অনুযায়ী, রাজা শ্রীচন্দ্র চন্দ্রপুর, গরলা ও পোগারা বিষয়ের ভূমি একত্রে দান করেছেন। যা একত্রে চন্দ্রপুর হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
তাম্রশাসনের বর্ণনা অনুযায়ী, চন্দ্রপুরের সীমানার পূর্বে বিরাটকোট্টালি, দক্ষিণে মাণি নদী, উত্তরে কোসিয়ার নদী ও পশ্চিমে জুজনাখাতক, কাষ্ঠপণ্যখাতক, ভেত্রা-গাঙ্ঘী নদী।
কমলাকান্ত গুপ্তের মতে, পূর্বের বিরাট কোট্টালি পূর্বদিকের পাহাড়ের ওপর অবস্থিত কোনো দুর্গ। যা তার ধারণামতে, বর্তমানের আদমআইল পাহাড়, মাণি নদী (বর্তমানের মনু নদী), কোসিয়ার নদী (বর্তমানের কুশিয়ারা নদী) ও পশ্চিমের সীমানাগুলো বর্তমানের হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চলে প্রবাহিত বেশ কিছু পুরাতন নদী-খালের নাম। যা বর্তমানে ভিন্ন নামে প্রবাহিত হচ্ছে।
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনসহ অন্য কয়েকটি তাম্রশাসন, প্রাচীন নথি ও ইতিহাসের ভিত্তিতে কমলাকান্ত গুপ্ত শ্রীহট্টের মধ্যে চন্দ্রপুরের একটি ম্যাপ অঙ্কন করছেন এবং তার মতে, চন্দ্রপুর প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার বা ছয় দশমিক চার লাখ একরের বিস্তৃত এক ভূখণ্ড।
কমলাকান্ত গুপ্তের তথ্যমতে, (পরিবর্তিত উপজেলা সীমানা বিভাগসহ) চন্দ্রপুর বিষয়ের সীমানা বর্তমানের মৌলভীবাজার জেলা সদর উপজেলা, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলা সম্পূর্ণসহ শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জের আংশিক, সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানী নগরের আংশিক; হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট ও আউশকান্দির আংশিক এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর ও কৈলাশহরের আংশিক অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।
যেখানে সংরক্ষিত পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন বর্তমানে ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে এবং জাদুঘরের একটি দেয়ালে শো-কেসে সুরক্ষিতভাবে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন এবং কমলাকান্ত গুপ্তের বইয়ের মূল সংস্করণের একটি কপি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। অনেকেই না জেনে এটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেন না বা অন্যত্র আছেন বলছেন। তাদের প্রতি এই জাদুঘরে এসে তাম্রশাসনটি দেখে যাওয়ার অনুরোধ থাকবে।’
আমিনুর রশীদ চৌধুরী ও তার ছেলে হ্যারল্ড রশীদকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের কারণে আমাদের ইতিহাসের এ অন্যতম নথি সংরক্ষিত ছিল এবং হ্যারল্ড রশীদ এটি জাদুঘরে দিয়ে সুদীর্ঘকালের জন্য সংরক্ষণের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত এবং গবেষকরাও চাইলে এ তাম্রশাসন নিয়ে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে আসতে পারেন।’
Comments