মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

দুপুরে নিয়োগ পরীক্ষা, রাতে ফল, অংশ না নিয়েও উত্তীর্ণ!

শনিবার দুপুরে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। গভীর রাতে দেওয়া হলো ফল। পরদিনই আবার মৌখিক পরীক্ষা। দেখা গেল, পরীক্ষায় অংশ নেননি এমন একজনও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

শনিবার দুপুরে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। গভীর রাতে দেওয়া হলো ফল। পরদিনই আবার মৌখিক পরীক্ষা। দেখা গেল, পরীক্ষায় অংশ নেননি এমন একজনও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অস্থায়ী রাজস্ব) পদের নিয়োগে এই ঘটনা ঘটেছে।

২৮ নভেম্বর শনিবার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ৪২টি পদের বিপরীতে ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে। পরীক্ষা শেষে শনিবার দিবাগত ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগ থেকে স্নাতক করা শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাদের অনেকেই এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে ও মেসেজে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানান, এখানে মোট পরীক্ষার্থী ছিল দুই হাজার ৮২০ জন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এক হাজার ২১৪ জন। অর্ধেকেরও বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেননি। কারণ এখানে অতীতেও নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। এবারও তাই হয়েছে। এর প্রমাণ- লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২৭ জনের তালিকায় ‘২১৯০’ নামক একটি রোল আসে। কিন্তু তিনি পরীক্ষাতেই অংশ নেননি।

‘২১৯০’ রোল নম্বরধারী শামসুন্নাহারের বাড়ি বগুড়া। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুন্নাহার আজ রোববার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি পরীক্ষা দিতে যাইনি। বগুড়ায় ছিলাম। আমার বন্ধু-বান্ধবরা জানাল যে আমি চান্স পেয়েছি। এরপর আমাকে একটা নম্বর থেকে বার বার ফোন করে বলা হয়, আমি যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেইনি, আমি যেন ভাইভা দিতে না যাই। গেলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমি তখন জানতে চাই, পরীক্ষা দিতে না যাওয়ার পরেও আমার রোল এলো কেন? আমাকে বার বার ফোন দেওয়া হচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার এখন আতঙ্কিত।’

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কয়েকজনের অভিযোগ, তারা ভালো পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কারণ বিএফআরআই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবসময় দুর্নীতি হয়। এবারও তাই হয়েছে। ভুল করে ‘২১৯০’ নম্বর রোলটি না আসলে এবারও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হতো না।

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, খাতায় কারও নাম থাকে না বলে যারা কোডিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তারাই পছন্দের প্রার্থীকে শনাক্ত করে বেশি নম্বর দেখিয়ে তাদের পাস করিয়ে দেন। আর যোগ্যরা বাদ পড়েন। মূলত আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমেই এখানে নিয়োগ হয়। 

বাংলাদেশ মৎস্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি আসলে ভুল করে হয়েছে। ওই পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষা দিতে এলে আমরা ধরে ফেলতাম।’

দুপুরে পরীক্ষা শেষে রাতেই কী করে ফল দিলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের নয় জন ও ইনস্টিটিউটের ৬০ জন কর্মকর্তা রাতেই খাতা দেখেছেন।’

তাড়াহুড়োর কারণেই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমাদের নিয়োগ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কোনো ভুল হলে, সেটি আমরা সংশোধন করব।’

শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

53m ago