শেষ মুহূর্তের গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল
শুরুর দিকে এগিয়ে যাওয়া কলম্বিয়া পাচ্ছিল দারুণ এক জয়ের সুবাস। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হলো তাদের। শেষদিকে রবার্তো ফিরমিনোর বিতর্কিত লক্ষ্যভেদে সমতায় ফেরা ব্রাজিল ঘুরে দাঁড়িয়ে তুলে নিল পূর্ণ পয়েন্ট। যোগ করা সময়ের দশম মিনিটে জয়সূচক গোলে নায়ক বনে গেলেন কাসেমিরো। টানা তৃতীয় জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ আটে ওঠা নিশ্চিত করল তিতের শিষ্যরা।
বৃহস্পতিবার সকালে কোপা আমেরিকার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে সেলেসাওরা। রিও দি জেনেইরোর নিলতন সান্তোস স্টেডিয়ামে দশম মিনিটে কলম্বিয়াকে লিড পাইয়ে দেন লুইস দিয়াজ। ৭৮তম মিনিট পর্যন্ত তা ধরে রাখলেও অপ্রতিরোধ্য ব্রাজিলকে শেষ পর্যন্ত হারের স্বাদ দিতে পারেনি তারা।
গ্রুপের শীর্ষে থাকা ব্রাজিলের অর্জন তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট। এক ম্যাচ বেশি খেলে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে কলম্বিয়া। তিন ম্যাচ খেলা পেরুর পয়েন্টও ৪। গোল ব্যবধানে পিছিয়ে তারা রয়েছে তৃতীয় স্থানে। একই মানদণ্ড অনুসারে ইকুয়েডর চার ও ভেনেজুয়েলা পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে। দুদলেরই পয়েন্ট তিন ম্যাচে ২।
বল দখলের লড়াইয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখানো ব্রাজিল প্রতিপক্ষের গোলমুখে শট নেয় ১৫টি। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল কেবল চারটি। অন্যদিকে, রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নেওয়া কলম্বিয়ার তিন শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে।
প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ কাজে লাগিয়ে কলম্বিয়াকে শুরুতেই উল্লাসে মাতান দিয়াজ। হুয়ান কুয়াদ্রাদো দূরের পোস্টে ক্রস ফেলে খুঁজে নিতে চেয়েছিলেন উইলমার বারিওসকে। তিনি বলের নাগাল না পেলেও অসাধারণ বাসাইকেল কিকে জাল খুঁজে নেন পেছনেই ফাঁকায় থাকা দিয়াজ। কিছুই করার ছিল স্বাগতিকদের গোলরক্ষক ওয়েভারতনের।
সবমিলিয়ে টানা ছয় ম্যাচে জাল অক্ষত রাখার পর গোল হজম করে ব্রাজিল। চলতি কোপা আমেরিকায় নিজেদের আগের দুই ম্যাচে পেরুকে ৪-০ ও ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা।
একাদশে পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা ব্রাজিল ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রেখেছিল প্রথম থেকেই। কিন্তু বিরতির আগে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনাকে তারা পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। প্রথমার্ধে তাদের কেবল একটি শট ছিল লক্ষ্যে।
দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি খোলসে ঢুকে পড়ে কলম্বিয়া। তাতে অধিকাংশ সময়ে তাদের অর্ধেই চলে খেলা। ৫৬তম মিনিটে দলকে সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল নেইমারের সামনে। কিন্তু ওসপিনাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
চার মিনিট পর গোলমুখে ক্রস ফেলেছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর ফিরমিনোর কেউই। ৬৪তম মিনিটে দানিলোর শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
৬৬তম মিনিটে ভাগ্য নেইমারকে সহায়তা করলে গোল পেতে পারত ব্রাজিল। ফিরমিনোর পাসে ওসপিনাকে কাটানোর পর ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ব্যর্থ হন তিনি। তার শট বাধা পায় পোস্টে।
অবশেষে ৭৮তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। রেনান লোদির ক্রসে বদলি ফিরমিনোর হেড ওসপিনাকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। কিন্তু তখন তেতে ওঠেন কলম্বিয়ার ফুটবলাররা। গোল বাতিলের দাবিতে রেফারির সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়েন তর্কাতর্কিতে।
গোলের আগে নেইমারের শট রেফারির গায়ে লাগলে কলম্বিয়ার খেলোয়াড়রা খেলা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু রেফারি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে ওই আক্রমণ থেকেই সমতায় ফেরে ব্রাজিল। পরে ভিএআরের সাহায্য নেওয়া হলেও টিকে যায় গোল।
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অনেকটা সময় নষ্ট হওয়ায় যোগ করা হয় বাড়তি দশ মিনিট। আর একদম শেষ মিনিটে বাজিমাত করে ব্রাজিল। নেইমারের কর্নারে দারুণ হেডে নিশানা ভেদ করেন বদলি কাসেমিরো।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আগামী সোমবার ইকুয়েডরকে মোকাবিলা করবে ব্রাজিল। গোইয়ানিয়াতে খেলাটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় ভোর তিনটায়।
Comments