দুর্গম এলাকায় পৌঁছেনি পরিবার পরিকল্পনা সেবা

২০১৯ এ সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউমেন ডেভেলপমেন্ট, দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ও দ্য ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের একটি যৌথ গবেষণা থেকে চা বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রজনন ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবার করুণ পরিস্থিতির বিস্তারিত উঠে আসে।

২০১৯ এ সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউমেন ডেভেলপমেন্ট, দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ও দ্য ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের একটি যৌথ গবেষণা থেকে চা বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রজনন ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবার করুণ পরিস্থিতির বিস্তারিত উঠে আসে।

গবেষণাটি থেকে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার ১২টি চা বাগানে কর্মরত নারীদের প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং বিবাহিতদের ৫৫ শতাংশ কখনোই কোনো ধরণের গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নেননি। সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকাতেও পরিস্থিতি প্রায় একই। সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থার করুণ অবস্থা, নিরক্ষরতা ও গ্রাম্য ধাত্রীদের পরিবার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রচারণা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ না করতে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের নারীদের মধ্যে গর্ভনিরোধক ব্যবহারের মাত্রা (সিপিআর) ছিল সবচেয়ে কম (৩২ দশমিক সাত শতাংশ)।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য সহকারীর বরাতে জানা যায়, চা বাগানের শ্রমিকদের পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বললেই চলে। মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মৃত্যু, গর্ভপাত, অল্প বয়সে সন্তান ধারণের কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক বোঝা এবং অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করার বিরুদ্ধে আইনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। এই নারী শ্রমিকরা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এমনকি হাসপাতালেও যেতে চান না। তারা স্থানীয় ধাত্রীদের ওপর নির্ভর করেন, যাদের বেশিরভাগেরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই। অপ্রশিক্ষিত ধাত্রীরা সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বিভিন্ন জটিলতায় ভোগা নারীদের জন্য বড় ধরণের ঝুঁকির কারণ।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের (ডিজিএফপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ৭০টি কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং ৩৫০টি ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে একই ধরণের সেবা দেওয়া হয়। সরকার ২০২২ এর মধ্যে সকল ইউনিয়নে এ রকম কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু একই সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, উপরে বর্ণিত সিলেট অঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোতে এ ধরণের সেবা দেওয়া খুবই জরুরি। এ ছাড়াও, সেসব এলাকার নারীদের কেন্দ্রে এসে সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

মানসম্পন্ন ও টেকসই শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বেশি বাজেটের বরাদ্দ পরিবার পরিকল্পনার প্রচারণাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে। সরকারের উচিৎ উপযুক্ত সময়ে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চা বাগান শ্রমিকদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া। এমনকি পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা সপ্তাহে একদিনও যদি চা বাগান শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে যান, তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপকরণ দেন, সেটিও তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা ও ভালো থাকার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দুর্গম এলাকাগুলোতে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরি করার জন্য প্রচারণা চালানো খুবই জরুরি এবং এর জন্য সরকার ও এনজিওগুলোকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Rain, at last, in some parts of Dhaka

After a month-long severe heatwave, Dhaka experienced rain and thundershowers in parts of the capital last night

53m ago