ঝালকাঠির পেয়ারা ব্যবসায় করোনার ‘থাবা’, বন্ধ বাগানকেন্দ্রিক পর্যটন

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়ন ও নবগ্রাম ইউনিয়নের ভীমরুলী বিলসহ বিভিন্ন খালে পেয়ারার ভাসমান হাট জমে উঠে।
jhalokathi_guava_25july21.jpg
করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে কমেছে পেয়ারার চাহিদা। লোকসান গুণছেন ঝালকাঠির ভাসমান বাজারে আসা চাষিরা। ছবিটি গত শুক্রবার তোলা। ছবি: টিটু দাস/স্টার

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়ন ও নবগ্রাম ইউনিয়নের ভীমরুলী বিলসহ বিভিন্ন খালে পেয়ারার ভাসমান হাট জমে উঠে।

পাশাপাশি পেয়ারা কিনতে দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে আসা পর্যটকদের পদভারে মুখর হয়ে ওঠে পেয়ারার বাগান ও হাটগুলো।

এবার করোনা মহামারির কারণে আষাঢ় শেষে শ্রাবণ মাসের প্রথম ভাগ পার হতে চললেও আগের সেই জমাট চিত্র দেখা যাচ্ছে না। উৎপাদিত পেয়ারার ক্রেতা নেই বললেই চলে। তেমন দামও পাচ্ছেন না চাষিরা। মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে মাত্র পাঁচ টাকা দরে। কখনো তা নেমে যাচ্ছে এরও অর্ধেকে।

চলমান লকডাউনসহ মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে এবারের মৌসুমে পেয়ারা ব্যবসায় মন্দার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত শুক্রবার সকালে পেয়ারা চাষি সুনীল হালদার নৌকায় করে দুই মণ পেয়ারা নিয়ে ভীমরুলী বাজারে গিয়েছিলেন বিক্রির জন্য। কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত অর্ধেক পেয়ারাও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।

দেশজুড়ে পরিচিত ভাসমান এই বাজারটি দেখতে আসা পর্যটকদের নিয়ে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ান সুদেব হালদার। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'সিজন (মৌসুম) শুরু হয়েছে। কিন্তু পাইকার নেই, লোকজন নেই। তাই আমাদের ইনকামও নেই।'

jhalokathi_guava1_25july21.jpg
চাহিদা কমে যাওয়ায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণের পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ছবি: টিটু দাস/স্টার

আক্ষেপ করে বাজারের এক খুচরা পেয়ারা ব্যবসায়ী বলেন, 'পেয়ারা চাষ করা আমাদের কাছে এখন অভিশাপ। পেয়ারা দ্রুত পচে যায়, সংরক্ষণ করা যায় না। তাই জলের দামে বিক্রি করতে হয়।'

জাকির হোসেন নামে এক পাইকারি ক্রেতা জানান, আগে এমন সময়ে তিনি দৈনিক ৩০০ মণ পেয়ারা ঢাকার শ্যামবাজারে পাঠাতেন। এবার তার অর্ধেক চাহিদাও নেই। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণের পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।

স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক নারায়ণ হালদারের ভাষ্য, বছরের এই সময়ে পেয়ারা ব্যবসা ও পর্যটন ঘিরে এলাকাটি জমজমাট থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। মহামারির কারণে গত বছরেও একই অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। তাই পেয়ারা চাষিদের দুর্দিন আর কাটছে না।

ভীমরুলী হাটে অন্ধ স্বামী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের বাগানে উৎপাদিত কিছু পেয়ারা বিক্রি করতে এসেছিলেন পুষ্প হালদার নামে এক নারী। তিনি বলেন, 'ভেবেছিলাম এবার পেয়ারা বিক্রি করে ঘরটি মেরামত করবো। কিন্তু এখন সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনা, লকডাউন আমাদের সব আশা কেড়ে নিয়েছে।'

ভীমরুলী বাজারে প্রতি কেজি পেয়ারা পাঁচ টাকায় বিক্রি হলেও ঝালকাঠি শহরে তা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

ঝালকাঠি কৃষি বিভাগ, পেয়ারাচাষি ও বাগানমালিকদের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে ভীমরুলী বিলের আশপাশে স্বরূপকাঠি জাতের পেয়ারার আবাদ শুরু হয়। এই জাতটি আনা হয়েছিল ভারতের তীর্থস্থান গয়া থেকে। বংশ পরম্পরায় এখানকার মানুষ পেয়ারার আবাদ করে আসছেন। সাধারণত মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছে ফুল আসে। আর ফল পাকা শুরু হয় আষাঢ় মাসে।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তৌফিকুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা সত্য যে পেয়ারা চাষিরা যথেষ্ট দাম পাচ্ছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহায়তার জন্য তালিকা তৈরির কাজ চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Met office issues 48-hour heat alert

Bangladesh Meteorological Department (BMD) today issued a countrywide heat alert for 48 hours starting this evening

13m ago