বাংলাদেশ

১২ বছরে ৬২ হাজার বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে গেছে: ব্র্যাক

গত ১২ বছরে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৩ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি নয়টি ভিন্ন ভিন্ন রুটে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। তাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
তুর্কি কোস্টগার্ড কমান্ড এজিয়ান সাগরে গ্রিস থেকে পুশব্যাক করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করছে। ফাইল ছবি

গত ১২ বছরে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৩ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি নয়টি ভিন্ন ভিন্ন রুটে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। তাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

আন্তর্জাতিক মানব-পাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এই তথ্য জানিয়েছে।

'মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও ও করণীয়' শীর্ষক ওয়েবিনারে ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের বরাতে ব্র্যাক জানায়, বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৭ হাজার ১৯৮ জন কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরীয় রুট ব্যবহার করে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন।

এছাড়াও, ১৭ হাজার ৬৩৯ জন বাংলাদেশি পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুট (সমুদ্র ও স্থলপথ উভয়ই) এবং আরও ৮৫৭ জন পশ্চিমা ভূমধ্যসাগরীয় রুট (সমুদ্র ও স্থলপথ উভয়ই) ব্যবহার করে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে ইউরোপে প্রবেশ করেন।

ইউরোপে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত অন্য চারটি রুট হলো—ওয়েস্টার্ন বলকান রুট, ওয়েস্টার্ন আফ্রিকান রুট, আলবেনিয়া থেকে গ্রিস পর্যন্ত সার্কুলার রুট এবং ইস্টার্ন বর্ডার রুট।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের মোট ২২ লাখ ২৪ হাজার ২৪৫ জন মানুষ এভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসে। এভাবে আসতে গিয়ে একই সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ হাজার ৭০৭ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের তথ্য অনুযায়ী, এভাবে যত মানুষ ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশি।

ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ৩১ থেকে ৩৫ বছরের মানুষ সবচেয়ে বেশি। গত কয়েকবছরে ইউরোপ ও লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ২ হাজার ২৮৪ জনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এসব জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এভাবে ইউরোপে যেতে জনপ্রতি ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, 'এটি আমাদের জন্য একটি ভয়ংকর চিত্র।'

ফ্রন্টেক্স ইউরোপ অনিয়মিত অভিবাসনের জন্য নয়টি রুট চিহ্নিত করলেও শরিফুল বলেন, 'ব্র্যাকের নিজস্ব গবেষণায় ১৮টি ভিন্ন রুটের সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে ইউরোপে যাচ্ছেন।'

এ ধরনের দুটি রুট হলো বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান-তুরস্ক-গ্রিস এবং বাংলাদেশ-দুবাই-বাহরাইন-তুরস্ক-লিবিয়া-ইতালি।

শরিফুল আরও জানান, গত দুই বছরে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় দুবাই গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, তাদের অনেকেই অবৈধ উপায়ে ইউরোপে অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেন।

২০০৮ সাল থেকে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৩ হাজার বাংলাদেশিকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ার‌ম্যান সাবেক সচিব নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, 'মানব পাচার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে সজাগ। দায়িত্বরত সবাইকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তাদের প্রতিহত করতে হবে।'

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, 'জেনে বুঝে দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে হবে। প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। একইভাবে যারা দায়িত্ব পালন করেন সেই সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সবার মানবপাচার ও অভিবাসন আইনের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার।'

Comments

The Daily Star  | English
World Press Freedom Day 2024

Has Bangladesh gained anything by a restrictive press?

The latest Bangladesh Bank restriction on journalists is anti-democratic, anti-free press and anti-public interest.

7h ago