১৩ সংগঠনের মানববন্ধন

নামসর্বস্ব মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়, কার্যকর ব্যবস্থাপনার দাবি

নামসর্বস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়, মেডিকেল বর্জ্যের কার্যকর ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নাসফসহ ১৩টি সংগঠন।
নামসর্বস্ব মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়, মেডিকেল বর্জ্যের কার্যকর ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ ১৩টি সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত

নামসর্বস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়, মেডিকেল বর্জ্যের কার্যকর ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নাসফসহ ১৩টি সংগঠন।

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই দাবিতে মানববন্ধন করে সংগঠনগুলো।

পবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি সুষ্ঠ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যত অনুপস্থিত। এই অনিয়ন্ত্রিত মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সাধারণ বর্জ্যের সাথে মিশে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও পবার সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাসফ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নিবার্হী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, বিডিক্লিক এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুসসহ অনেকে।

বক্তারা বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর, পৌরসভায় মেডিকেল বর্জ্য বড় সমস্যা। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে এই সমস্যা আরও প্রকটভাবে দৃশ্যমান। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের বর্জ্য রাজধানীর চার পাশের নদীসহ হাসপাতালগুলোর সামনের খোলা ডাস্টবিন কিংবা নর্দমায় ফেলা হচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মেডিকেল বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কার্যকর বাস্তবায়ন এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের কলেবর বেড়েছে, সেইসাথে ডিসপোজিবল/একবার ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবহারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্যের তালিকায় আছে ব্যবহৃত সূঁচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিউমার, ওষুধের শিশি, রক্তের ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, মেয়াদোরত্তীর্ণ ওষুধ, ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভৃতি।

তাছাড়া পয়:নিষ্কাশন লাইনের সাথে পানির পাইপের সংমিশ্রণেও সংক্রামক রোগের ব্যাপক বিস্তার হয়। এই বর্জ্যের বেশির ভাগই সংক্রামক, এগুলোর মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ আশংকাজনক হারে বাড়ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, 'স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরের সরকারি হাসপাতাল আছে ৬৪৫টি এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৯৪টি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৪৪৫২টি, ক্লিনিক ২২৩৬টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১০২৯১, সর্বমোট ১৬৯৭৯টি। ২০০০ সালে ছিল যথাক্রমে ১১২৫টি, ৬৩৩টি, ১৭৭৮টি, সর্বমোট ৩৫৩৬টি। দুই দশকে হাসপাতাল বেড়েছে চার গুণ, ক্লিনিক সাড়ে তিন গুণ, ডায়গনোস্টিক সেন্টার প্রায় ছয় গুণ, মোট বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা মোট ১৭৭১৮টি। সরকারি হাসপাতালে বেড রয়েছে ৫২৮০৭টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১০৫১৮৩টি।

প্রিজম নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঢাকায় ১২০০টি হাসপাতালের সাথে চুক্তিবদ্ধ। করোনার আগে এ সংস্থা প্রতিদিন ১৪ টন বর্জ্য সংগ্রহ করতো। গড়ে প্রতিটি হাসপাতাল থেকে ১১ দশমিক ৭ কেজি। বর্তমানে প্রতিদিন ৭-৮ টন বর্জ্য সংগ্রহ করছে। অথচ একটি হিসাব মতে ঢাকায় দৈনিক নূনতম ২০৬ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। হাসপাতালগুলো তাদের বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করছে না- এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল ডিজাইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মেডিকেল বর্জ্যরে নিরাপদ নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে হাসপাতাল ডিজাইনের ক্ষেত্রে যা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে ৫টি দাবি জানানো হয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। এগুলোর মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা ২০০৮ অনুসারে বর্জ্য সমূহ উৎসেই যথাযথভাবে পৃথক করে সঠিকভাবে ডিস্পোজাল করতে হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষার সব শাখায় বিশেষ করে এমবিবিএস, নার্স এবং মিডওয়াইফ কারিকুলামে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা ও হাসপাতালে নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য বাজেটে মেডিকেল বর্জের নিরাপদ নিষ্কাশনের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে বলে জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Abnormally high-priced purchases by Power Grid Company of Bangladesh

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

13h ago