পরিবেশ

কক্সবাজারে ৭০০ একর বনভূমিতে প্রশাসন একাডেমি স্থাপনে সংসদীয় কমিটির ‘না’

কক্সবাজারে বরাদ্দ দেওয়া ৭০০ একর বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের বিরোধিতা করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
Jatiya Sangsad
জাতীয় সংসদ। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

কক্সবাজারে বরাদ্দ দেওয়া ৭০০ একর বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের বিরোধিতা করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

আজ জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে জোরালো সুপারিশ করে।

সরক্ষিত এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষিত এই বিপুল বনভূমি কিভাবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলো তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখতে বলছে সংসদীয় কমিটি।

বন অধিদপ্তর আজ সংসদীয় কমিটিকে বলেছে, সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে প্রস্তাবিত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সভা শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, 'আমরা যেখানে বেদখল বনভূমি উদ্ধার করছি। সেখানে সরকারের আরেকটি সংস্থা সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে নেয়, এটা তো ঠিক না।'

সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।

২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্টেশন নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়। সংস্থাটি ওই বছরই বিভিন্ন শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়।

সাবের হোসেন বলেন, ওই এলাকাকে ১৯৩৫ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে এটাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা হয়।

২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে আছে।

সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই জমিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০০ একর সৃজিত বাগান আছে। ২০-২০০ ফুট পর্যন্ত বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় আছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো, গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। ওই এলাকা হাতি, বানর, বন্য শুকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল।

সংসদীয় কমিটিকে মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই এলাকায় প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, 'আমরা বোঝার চেষ্টা করছি এটা কীভাবে হলো। যদি কেবল জমির দাগ ও খতিয়ান দেওয়া হয় এবং ভূমিকার আকার ও প্রকৃত বর্ণনা না করেন, সেটা হতে পারে কী না। আমরা মনে করি সেটাই হয়েছে। এটা আমরা দেখব। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে অনুমতি এসেছে সেই দপ্তরও হয়তো এই বিষয়টি পুরোপুরি জানে না।'

তিনি বলেন, 'এই জমির বিষয় আদালতের নির্দেশনা আছে। সংরক্ষিত বন হিসেবে এই জমির মালিক জেলা প্রশাসন। এ জমি কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয়। কাজেই এই জমি বন্দোবস্তের কোনো সুযোগ নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'জনপ্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে আমরা সমর্থন করি। তবে ওই জায়গায় এটা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ এটা সংবিধান পরিপন্থী। এটা অন্য জায়গায় হোক।'

ওই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা চূড়ান্ত অনুমতি না দিতে বলেছি।'

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠাবে বলে তিনি জানান।

বনভূমির ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া 'বিধিসম্মত' হয়নি উল্লেখ করে সাবের হোসেন বলেন, 'যেহেতু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন তারা প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র চেয়েছে। আমরা এটা না দিতে বলেছি। পরিবেশ মন্ত্রীও আমাদের সঙ্গে একমত।'

বনবিভাগ থেকে আগেই আপত্তি দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বন বিভাগ থেকে আগেই বলেছিল এটা দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটা ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা জানতো না জমির ধরন কী। তাদের কাছে হয়তো দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেওয়া হয়েছে।'

সাবের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং মো. শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English
digital security act

Press freedom index: Bangladesh falls 2 spots, only Afghanistan worse in South Asia

The country was ranked 165th among 180 nations, placing it only above Afghanistan among South Asian countries

21m ago