অর্থনীতি

গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে ৩২ শতাংশ

বাংলাদেশে গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ আগের পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। করোনা মহামারির কারণে ঋণগ্রহীতারা কিস্তি পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়েছেন, ফলে গত অর্থবছরে মাত্র ৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধিত হয়েছে।

বাংলাদেশে গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ আগের পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। করোনা মহামারির কারণে ঋণগ্রহীতারা কিস্তি পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়েছেন, ফলে গত অর্থবছরে মাত্র ৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ কমেছে ৩২ শতাংশ।

গত বছরের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মহামারির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করার সুবিধা চালু করে। এই প্রক্রিয়াটি সার্বিকভাবে ঋণ আদায়কে প্রভাবিত করেছে।

দেশে মহামারি আঘাত হানার পর ২০২০-এর প্রথম প্রান্তিকে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ৮৬৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। ২০১৭ অর্থবছরের পর এবারই প্রথম এক প্রান্তিকে ঋণ আদায়ের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।

পরবর্তী প্রান্তিকগুলোতে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আগের পর্যায়ে ফিরে এলেও ২০২১ অর্থবছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে আবারও তা কমে যায়।

ব্যাংকগুলো সামগ্রিকভাবে গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা আদায় করেছে, যেটি তৃতীয় প্রান্তিকের ১ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার চেয়ে কিছুটা কম।

৬টি সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহকরা চতুর্থ প্রান্তিকে ২৮০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে, যা তৃতীয় প্রান্তিকের ১৬৭ কোটি টাকার চেয়ে বেশি। ব্যাংকগুলোর কাছে গত অর্থবছরের শেষে খেলাপি ঋণ হিসেবে ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা থেকে যায়।

৪১টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক চতুর্থ প্রান্তিকে ৯৩৭ কোটি টাকা ও তৃতীয় প্রান্তিকে ৬৪২ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এতে অর্থবছরের শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে ৪৫ হাজার ১০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হিসেবে থেকে যায়।

৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণখেলাপিরা চতুর্থ প্রান্তিকে ৪৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি টাকা। ২০২১ অর্থবছরের শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর অপরিশোধিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।

৩টি সরকার নিয়ন্ত্রিত বিশেষায়িত ব্যাংক ৫৩১ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে। এর আগের প্রান্তিকে পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। ২০২১ অর্থবছরে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৯৯ কোটিতে।

অর্থবছরের শেষে ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিবদ্ধ ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অবকাশ সুবিধা দেওয়ায় খেলাপি ঋণ আদায় কমে গেছে।

তিনি বলেন, 'এখন আমাদের ঋণ আদায়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত। ঋণ আদায়ের জন্য আমাদের উদ্যোগ বাড়াতে হবে। এটা করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হবে।'

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ জানান, তারা খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে একটি ১০০-দিনব্যাপী উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন।

তিনি জানান, ব্যাংকগুলোকে তাদের ভোক্তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাতে হবে, কারণ ধীরে ধীরে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার গতিশীল হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমরা যদি রক্ষণশীল মনোভাব বজায় রাখি, তাহলে চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় গতি পাবে না।'

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'গত বছর বেশ দীর্ঘ সময় ধরে আদালত বন্ধ থাকায় আমরা ঋণ আদায়ে আইনি ব্যবস্থা শুরু করতে পারিনি।'

তিনি আরও বলেন, 'মহামারির কারণে আমরা ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করতে পারিনি।'

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Will there be any respite from inflation?

To many, especially salaried and fixed-income individuals, this means they will have no option but to find ways to cut expenditures to bear increased electricity bills.

5h ago