তাইওয়ান আক্রমণ করবে না চীন: বিশ্লেষকদের মত
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ কুও-চেং গত সপ্তাহে বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে চীন তাইওয়ানে 'পূর্ণ মাত্রায়' আক্রমণ করতে সক্ষম হবে। চীন তাইওয়ানের আকাশে সর্বোচ্চ সংখ্যক যুদ্ধবিমান পাঠানোর কারণে তিনি এ ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাকবিতণ্ডা ও সামরিক তৎপরতা থাকলেও চীন খুব শিগগির তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারবে না। অন্তত আগামী ১২ মাসে চীনের আক্রমণের সম্ভাবনা 'শূন্যের কাছাকাছি' বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
আজ শনিবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকেই বেইজিং তাইওয়ানের ব্যাপারে আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ২০০০ দশকের শুরুর দিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, বেইজিং ওই দশকের মধ্যেই তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে। এরপর ২০১৩ সালে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলে, চীন সরকার ২০২০ সালের মধ্যে তাইওয়ানে আক্রমণ করবে। কিন্তু এর কোনোটিই ঘটেনি।
তবে, তার মানে এই নয় যে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
তাইওয়ানসহ একটি একক দেশ বা 'এক চীনের' দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেইজিং তাইওয়ানের উপর সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা যদি মনে করেন যে তাদের শান্তিপূর্ণ 'পুন: একীভূতকরণের' কোনো আশা নেই, তবে তারা তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
দ্বীপ অঞ্চল তাইওয়ানকে নিজ দেশের অংশ মনে করে চীন। কিন্তু, তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। বেইজিং গত ৪০ বছর ধরে তার কূটনৈতিক মিত্রদের দ্বীপটিকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টায় সমর্থনের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তাইওয়ান ২০২০ সালের শুরু থেকে আরও বেশি বৈশ্বিক প্রভাব অর্জন করতে শুরু করেছে।
গ্লোবাল ইনস্টিটিউট তাইওয়ানের তাইপেই-ভিত্তিক সিনিয়র ফেলো জে মাইকেল কোল বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা তাইওয়ানকে নিজেদের প্রোফাইল বাড়াতে সাহায্য করেছে।'
জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক বনি গ্লাসার বলেন, 'আক্রমণের পূর্বাভাস নয়, চীনের বর্ধিত তৎপরতা তাদের হতাশার প্রতীক। এর মাধ্যমে চীনের "রেড লাইনস" অতিক্রম না করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে।'
এই 'রেড লাইনস' হচ্ছে সেসব কাজ, যেগুলো করলে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে সামরিক উত্তেজনার সূত্রপাত হতে পারে। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য প্রচার চালানো বা দ্বীপটিতে বিপুল সংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত আছে।
গ্লাসার বলেন, 'চীন তাইওয়ানকে একটি বাক্সে বন্দি রাখতে চায়। তারা তাইওয়ানকে ভয় দেখাতে চায়।'
এ ছাড়া, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের 'পুন: একীভূতকরণের' ব্যাপারে ঘোষণা দেন, তখন তার মধ্যে কোনো তাড়াহুড়োর আভাস দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন গ্লাসার।
তার মতে, তাইওয়ান বিষয়ে বেইজিংয়ের লক্ষ্য কেবল তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্র নয়। তাইওয়ানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২২ সালের চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসকে সামনে রেখে সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার অন চায়নার ফেলো ওয়েন-টি সাং বলেন, 'শি নভেম্বরে কমিউনিস্ট পার্টির বৈঠকের আগে সমর্থন বাড়াতে চান। ওই বৈঠকে উচ্চপদের প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।'
তাইওয়ানের ব্যাপারে একটি শক্তিশালী নীতি নির্ধারণ করে দিতে পারে যে তিনি পরবর্তী ৫ বছরের জন্য কতজন মিত্রকে শীর্ষ পদে রাখতে পারবেন।
Comments