‘হামারগুলার কষ্টের শ্যাষ নাই’
'হামারগুলার কষ্টের শ্যাষ নাই। আশ্বিন-কাত্তিক মাসে এ্যাদোন বান মুই দ্যাখোং নাই। হঠাৎ করি পানি আসিয়া হামাক ভাসি দ্যাইল, হামার সোককিছু ভাসি নিয়া গ্যালো।'
দ্য ডেইলি স্টারকে এভাবেই নিজের দুর্দশার কথা বর্ণনা করছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড় বাগডোরা গ্রামের বন্যাদুর্গত আছিয়া বেওয়া (৬৭)।
আকস্মিক বন্যায় আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বাড়িতে থাকা চাল-ডালও ভেসে গেছে তার। এখন কোথায় থাকবেন এবং কী খাবেন- তা নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
একই গ্রামের বন্যাদুর্গত সাহেদা বেগম (৩৪) জানান, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে তাদের ঘরে এখনও পানি। রাস্তার উপর চুলা বসিয়ে রান্না করে পরিবারের সদস্যদের খাওয়াচ্ছেন তিনি। ২টি ঘরের বেড়া পানির তোড়ে ভেসে গেছে। কয়েকটি মুরগি ও হাঁস ভেসে গেছে। জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, 'হামরা কল্পনা কইরবার পাইনি এ্যামন বান আইসবে। মোর বয়সে আশ্বি-কাত্তিক মাসে এ্যামন বান দ্যাখোং নাই। হঠাৎ করি পানি আসিয়া হামাকগুলাক ভাসে দ্যাইল।'
হাতীবান্ধা উপজেলার চর ডাউয়াবাড়ী এলাকার বন্যাদুর্গত আতিয়ার রহমান (৬০) বলেন, 'বাড়ি-ঘরোত অনেক পানি উঠায় হামরাগুলা বাড়ি-ঘর ছাড়ি সরকারি সড়কের উপর উঠছিলোং। পানি নামি গ্যাইলে বাড়ি আসি দ্যাখি ঘরের বেড়াগুলা পানিত ভাসি গ্যাইছে। নষ্ট হওয়া ঘরগুলা ঠিকঠাক কইরবার নাগছি। হামার হাতো টাতাও তো নাই।'
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অকাল বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তিস্তাপাড়ের কৃষক ও কৃষি। তিস্তাপাড়ের ১০ হাজারের বেশি কৃষি পরিবার এখন ফসলের জন্য আহাজারি করছে।
এ ছাড়া, বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ। এখনও তাদের বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি। পানির নিচে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
লালমনিরহাটে আকস্মিক এ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ও কাকিনা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুসিযাগাছ ইউনিয়ন।
এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে ৫ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের ৯০টি গ্রাম এবং চর ও দ্বীপ চরের ১৫ হাজার একরের বেশি জমির আমন ধান, ভুট্টা, আলু ও বিভিন্ন জাতের শাকসবজি। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজের পাশে গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৭) বলেন,'গত মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যায়। বন্যার পূর্বাভাস পেলে হযতো বাড়ির কিছু আসবাবপত্র ও কিছু ফসল রক্ষা করা যেত।'
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ডেইলি স্টারকে জানান, গত বুধবার সকালে পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। পানির তোড়ে কাকিনা-মহিপুর সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এখনও লালমনিরহাটের সঙ্গে রংপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া, তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় নীলফামারীর সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
ক্ষতির পরিমাণ বের করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মাঠে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
Comments