পরিবহন নেতারা সরকারের সঙ্গে থাকায় সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না: ইলিয়াস কাঞ্চন

রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহতের ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও রাস্তায় নামেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ইলিয়াস কাঞ্চন। স্টার ফাইল ফটো

রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহতের ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও রাস্তায় নামেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সে প্রসঙ্গে 'নিরাপদ সড়ক চাই' (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, পরিবহনের নেতারা সরকারের সঙ্গে থাকায় তারা অনেক ক্ষমতাবান। তাই নিরাপদ সড়কের দাবিগুলো পূরণ হচ্ছে না এবং আইনটিও কার্যকর হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, 'সরকারে যারা থাকেন তারা পরিবহন খাতের ধর্মঘটকে ভয় পান। কারণ পরিবহন ধর্মঘটের ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। ফলে সরকারের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় সমস্যা হয়। আর সরকার চায় না সেই সমস্যা তৈরি হোক।'

আজ বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'আমাদের দেশে ধাক্কা না দিলে কারো ঘুম ভাঙে না। সংশ্লিষ্টরা সবাই ঘুমিয়ে থাকেন। আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে যে আন্দোলন করছিলাম শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালে তা সংসদে যায়। সেই আইন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য পাস হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই আইন কার্যকর হয়নি। আইনটি কার্যকর হওয়ার আগেই এটি নিয়ে নানা দেন-দরবার হচ্ছে।'

দেশে যখন এই দাবিতে একটা চাপ আসে তখন সরকারের একটু টনক নড়ে। তারা দাবিগুলো পূরণের কথা বলেন। কিন্তু পরিবেশ শান্ত হয়ে গেলে সরকার সবকিছু ভু্লে যান। এ কারণে সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না বলে মনে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।

নিসচার দাবির ভিত্তিতে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেমন তথাকথিত ওস্তাদ-সাগরেদের মাধ্যমে ড্রাইভার হওয়া বন্ধ হচ্ছে। ইনস্ট্রাকটর তৈরির কাজ চলছে। যারা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাতো, তাদের তেমন শাস্তি না দিয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে বৈধ লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণকালে কিছু টাকা এবং খাবার দেওয়া হচ্ছে এটি সরকারর একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো যুগোপযোগী হয়নি।

পরিবহন নেতাদের কাছে জনগণ ও সরকার জিম্মি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই জিম্মি দশা থেকে বের হওয়ার জন্য যেসব পরিকল্পনা বা কৌশল নেওয়া দরকার এর আগে কোনো সরকার সে ধরনের পরিকল্পনা নেয়নি। প্রতিবারই পরিবহন নেতাদের কাছে হেরে যাওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। ফলে তাদের সাহস বেড়ে গেছে এবং তারা মনে করছেন যে তারা যা দাবি করবে সরকারকে সে দাবিগুলো পূরণ করতে হবে এবং জনগণকেও তা মেনে নিতে হবে। কারণ তারা একটা সংঘবদ্ধ শক্তি।'

তিনি বলেন, 'এই সংঘবদ্ধ শক্তিকে পরাজিত করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই ব্যবস্থাগুলো এখনো গড়ে উঠেনি। তবে গড়ে ওঠার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে। যেমন মেট্রোরেল, উড়াল সেতু হচ্ছে। ফলে সড়কের ওপর তেমন একটা চাপ থাকবে না। জনদুর্ভোগ কমে এলে সড়কের ওপর চাপ কমে যাবে।'

বিআরটিসিকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এত মালিক দিয়ে কোনো দেশে গণপরিহন চলে না। এই খাতকে পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মেয়র আনিসুল হক একটা কৌশল নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। তারপর থেকে মেয়ররা আসেন, আশ্বাস দেন কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেন না। কারণ তাদের আন্তরিকতার অভাব। তারা জনগণের প্রতি তেমন একটা দায়বদ্ধ নন।'

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'গণপরিবহনে সরকারের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য এই বিনিয়োগ দরকার। সড়কে আমাদের যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় তা কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশ আরও উন্নত হবে। আমি চাই সরকার ও পরিবহন নেতাদের চোখ খুলুক। সড়ক আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হলে দেশের সব মানুষ উপকৃত হবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

22h ago