সম্পাদকীয়

সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া

গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। পরদিন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আরও ৩ কলেজ শিক্ষার্থী—ঊর্মি মজুমদার, মাহবুব আলম ও সাদ্দাম হোসেন নিহত হন।
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। পরদিন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আরও ৩ কলেজ শিক্ষার্থী—ঊর্মি মজুমদার, মাহবুব আলম ও সাদ্দাম হোসেন নিহত হন।

গত সোমবার রাতে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী মাঈনুদ্দিন ইসলাম।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে শিক্ষার্থীরা আবারও নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি গণপরিবহনে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, হাফ পাসের দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে বিক্ষোভে রূপ নেয় যখন এক নারী শিক্ষার্থী হাফ ভাড়া দিতে চাইলে বাসের চালক ও হেলপার তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর পর ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের দাবি কিছুক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে। তবে অধিকাংশ বাস পরিষেবা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ায় এর সুবিধা বেশ সীমিতই।

গত এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থীর মৃত্যু ইঙ্গিত দেয় যে ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের সময় কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা ব্যর্থ হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ ও হতাশ হওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে তাদের প্রতিবাদের একটি দুঃখজনক পরিণতি হলো যে ঢাকা শহরে যানজটপূর্ণ রাস্তাগুলো আরও বেশি যানজটে পড়ে। বিশেষ করে, গত ৩০ নভেম্বর মাঈনুদ্দিনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে হাজারো শিক্ষার্থী রাস্তা আটকে প্রতিবাদ কর্মসূচি করায় যানজট আরও বেড়ে যায়।

বৈধ লাইসেন্সসহ প্রাইভেট যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি মেডিকেল যানবাহনগুলোকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও বাসে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবসময় সাধারণ নাগরিককে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তবে এখানে লক্ষণীয় হলো, বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা যখন বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট করেছিলেন সেসময়ও ব্যাপক জনদুর্ভোগ হয়েছিল। তখন তাদের দাবি মেনে নিতে সরকারকে দেরি করতে দেখা যায়নি।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও তারপর থেকে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও এ বছরের প্রথম ৬ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ২২২ জন নিহত হয়েছেন। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এখনও সম্পূর্ণরূপে প্রণয়ন করা হয়নি, বাস্তবায়ন তো দূরের বিষয়। ফলে শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে রাখার কারণে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে তার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে সরকারের কাঁধে বর্তায়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখন কী করা উচিত তা পুরোপুরি স্পষ্ট। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়কে মৃত্যু থেকে নাগরিকদের রক্ষায় সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Hilsa remains a luxury

Traders blame low supply for high price; not enough catch in rivers even after 2-month ban

1h ago