হাতের আঙুল নেই, কব্জি দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করল মোবারক

জন্ম থেকেই ২ হাতের আঙুল নেই কুড়িগ্রামের মোবারক আলীর (১৬)। তার উপর অভাবের সংসার তাদের। তবে এসবের কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এ বছর কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কব্জি দিয়ে লিখে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। পেয়েছে জিপিএ-৩.৮৪।
এ বছর কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কব্জি দিয়ে লিখে উত্তীর্ণ হয়েছে মোবারক। ছবি: সংগৃহীত

জন্ম থেকেই ২ হাতের আঙুল নেই কুড়িগ্রামের মোবারক আলীর (১৬)। তার উপর অভাবের সংসার তাদের। তবে এসবের কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এ বছর কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কব্জি দিয়ে লিখে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। পেয়েছে জিপিএ-৩.৮৪।

মোবারক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ও পরিবারের দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে পারবে কি না—সেই দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সে। তবে তার পরিশ্রমের কাছে হার মেনেছে সব প্রতিবন্ধকতা।

দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পা দিয়ে লেখার কাজ চালিয়ে যায় মোবারক। পরে হাতের কব্জি ব্যবহার করে লেখার চেষ্টা করতে থাকে। এক সময় বিষয়টি তার আয়ত্তে চলে আসে। কব্জি দিয়ে লিখেই ২০১৮ সালে কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পায় সে। এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিও পাস করল একইভাবে।

কষ্টের পর সাফল্যের দেখা পেয়ে খুশি মোবারক। সামনে আরও বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন তার।  

সেই স্বপ্নের কথা জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে মোবারক বলে, 'প্রথমদিকে কব্জি দিয়ে লিখতে খুব কষ্ট হতো। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি সংগ্রাম করছি। ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার স্বপ্ন দেখি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন উচ্চশিক্ষিত হতে পারি। যেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।'

'আমার বাবা দিনমজুর। তার পক্ষে আমার পড়াশুনার খরচ যোগান দেওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমি চেষ্টা করে যাব লক্ষ্যে পৌঁছানোর', যোগ করে সে।  

মোবারক আলীর বাবা এনামুল হক বলেন, 'আমরাও মোবারককে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করছে। আমার আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মোবারকের চাহিদা সবসময় মেটাতে পারি না। তবে চেষ্টা করব মোবারককে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে।'

মোবারক আলীর সহপাঠী শরিফুল ইসলাম বলে, 'মোবারক কব্জি দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর ও ঝকঝকে। সে মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সে দক্ষ।'

কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়েদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোবারক মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী সে। আর্থিক সমস্যা না থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কিছুটা সহজ হতো তার জন্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Driest April in 43 years

Average rainfall in Bangladesh was one millimetre in April, which is the record lowest in the country since 1981

1h ago