কৃষি

নিজেদের উৎপাদিত বীজে পেঁয়াজ চাষের খরচ কমলো

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মো. কামরুজ্জামানকে গত বছর পেঁয়াজ আবাদে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। চড়া দামে বীজ কিনে পেঁয়াজ রোপণ করতে হয়েছিল তাকে। এতে চাষের খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। চড়া দামে পিঁয়াজ বিক্রি করেও আশানুরূপ লাভ করতে পারেননি তিনি।
পাবনার সুজানগরে খেত থেকে পেঁয়াজ তুলছেন চাষিরা। ছবি: স্টার

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মো. কামরুজ্জামানকে গত বছর পেঁয়াজ আবাদে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। চড়া দামে বীজ কিনে পেঁয়াজ রোপণ করতে হয়েছিল তাকে। এতে চাষের খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। চড়া দামে পিঁয়াজ বিক্রি করেও আশানুরূপ লাভ করতে পারেননি তিনি।

গত বছর হতাশ হলেও এ বছর তিনি মনের আনন্দে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তার ঘরেই রয়েছে পেঁয়াজের বীজ। গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কামরুজ্জামান এ বছর প্রায় আধ মন পেঁয়াজের বীজ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। সেই বীজ দিয়ে চাষ করে তিনি এ বছর লাভবান হওয়ার আশা করছেন।

সুজানগর পাইকারি বাজার। ছবি: স্টার

কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ১ কেজি পেঁয়াজের বীজ কিনতে হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা কেজি দরে। চড়া দামে বীজ কিনে ২০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ হয়।'

'গত বছর ১০ লাখ টাকার বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারিনি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'নিজের ঘরের বীজ দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করে প্রথমে দুশ্চিন্তায় থাকলেও ভালো ফল পাওয়ায় এখন আশাবাদী হয়েছি।'

ছবি: স্টার

'সাধারণত বিঘা প্রতি ১ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, এ বছর ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম বীজ দিয়েই এক বিঘা জমির আবাদ করা সম্ভব হয়েছে। বীজের খরচ কম পড়ায় চাষের খরচ কমেছে।'

'প্রথম দফায় ১১ বিঘা জমিতে ঘরের বীজ দিয়ে আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়ায় আরও ৮/১০ বিঘা আবাদের পরিকল্পনা করছি। অতিরিক্ত বীজ বিক্রিও করেছি।'

তার মতো সুজানগরের প্রায় প্রতিটি পেঁয়াজ চাষির ঘরেই এ বছর নিজেদের বীজ রয়েছে। সেই বীজ দিয়ে পেঁয়াজ চাষে সবাই সফল হয়েছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পেঁয়াজের বীজের চড়া দামের কারণে অনেকেই হিমশিম খান। এ বছর তারা নিজেদের তৈরি বীজ থেকে পেঁয়াজ আবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি পেঁয়াজ আবাদের পরিমাণও বেশি হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

ছবি: স্টার

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর পাবনায় ৪৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয় ৬ দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন।' গত বছরের উৎপাদনকেই এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইতোমধ্যে ৩১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ চাষ শেষ হয়েছে। জানুয়ারি জুড়েই চলবে পেঁয়াজ চাষ। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

একদিকে, চারা পেঁয়াজ আবাদে যখন কৃষকরা ব্যস্ত অন্যদিকে তখন মূলকাটা পেঁয়াজ (কন্দ পেঁয়াজ) ঘরে তুলছেন কৃষকরা। বাজারে এসেছে নতুন পেঁয়াজ (মূলকাটা)। তবে, এ বছর মূলকাটা পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা হতাশ।

কৃষি বিভাগ জানায়, অক্টোবর-নভেম্বরে মূলকাটা পেঁয়াজ চাষ হয় এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এ পেঁয়াজ বাজারে আসে। চারা পেঁয়াজ ওঠার আগ পর্যন্ত মূলকাটা পেঁয়াজ দেশের চাহিদা মেটায়।

গত বছর পেঁয়াজের দাম চড়া থাকায় এ মৌসুমে ৯ হাজার ৩০৫ হেক্টরে আবাদ করে প্রায় ১ দশমিক ১১ লাখ মেট্রিক টন মূলকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়েছে। গত বছরের অর্জনকে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এ বছর ৮ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী।

ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ১০ লাখ মেট্রিক টন। এ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূলকাটা পেঁয়াজ কাটা চলবে।

কৃষকরা জানান, অনেকেই মূলকাটা পিঁয়াজ ঘরে তুলে তারপর চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে যাচ্ছেন। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগরগরি গ্রামের কৃষক মো. নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এ সময় এক মণ মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কিন্তু, এ বছর তা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।'

'মূলকাটা পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না তাই আশানুরূপ দাম না পেলেও পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা,' যোগ করেন তিনি।

পাবনার সুজানগর উপজেলার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। বড় পাইকারদের কাছে এখনও আমদানি করা পেঁয়াজের মজুদ আছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কম। আশা করি, এতো কিছুর পরও কৃষকের লোকসান হবে না।'

কৃষকের স্বার্থে পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানি বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর চারা পেঁয়াজ ও মূলকাটা পেঁয়াজ মিলে প্রায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭ লাখ টনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। পেঁয়াজ আবাদের অগ্রগতি দেখে আশা করা যাচ্ছে আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর ঠিক থাকলে কৃষকদের লোকসান হবে না। এ বছর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তারা লাভবান হবেন।'

পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে এখনও পুরোপুরি চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। প্রয়োজন অনুসারে আমদানি করা হয়। তবে এখন পেঁয়াজের সংকট নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

The invisible ones

Of the over 7 crore people employed in Bangladesh, 85 percent (nearly 6 crore) are vulnerable as they work in the informal sector, which lacks basic social and legal protection, and employment benefits.

3h ago