চলে গেলেন বাঙালির শৈশবের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ

বাঙালির শৈশব আর কৈশোরের পুরোটা জুড়ে তিনি। তার গড়া চরিত্রের সঙ্গেই বেড়ে উঠা শিশু কিশোর পাঠকের। হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল থেকে ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, কৌশিক রায়সহ অসংখ্য বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রের স্রষ্টা ছিলেন তিনি।
নারায়ণ দেবনাথ। ছবি: সংগৃহীত

বাঙালির শৈশব আর কৈশোরের পুরোটা জুড়ে তিনি। তার গড়া চরিত্রের সঙ্গেই বেড়ে উঠা শিশু কিশোর পাঠকের। হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল থেকে ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, কৌশিক রায়সহ অসংখ্য বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রের স্রষ্টা ছিলেন তিনি।

গত ৭০ বছরেরও অধিক সময় ধরে তার লেখা আর আঁকা কার্টুন প্রথম সঙ্গী হয়েছে শিশুদের। বাংলার শিশুদের হাতেখড়ি হয়েছে বলা চলে তার সৃষ্ট চরিত্রের মধ্য দিয়েই।

অবশেষে আজ সবকিছুর অন্তিম হলো। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন কিংবদন্তী কমিক শিল্পী ও লেখক নারায়ণ দেবনাথ।

গত ১৬ জানুয়ারি রাত থেকেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল নারায়ণ দেবনাথকে। বর্ষীয়ান এই শিল্পীর চিকিৎসায় পাশে দাঁড়িয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছিল মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ড। কিন্তু  গতকাল সোমবার থেকে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থাতেই শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে নারায়ণ দেবনাথের। গত ২৪শে  ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ৯৭ বছর বয়সী নারায়ণ দেবনাথকে।

নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শিবপুরে। তার পিতৃপুরুষের ভিটে ছিল বাংলাদেশের বিক্রমপুরে। শৈশবেই শিল্পের প্রতি অনুরাগ জন্মেছিল তার। পারিবারিক পেশা স্বর্ণকার হওয়ায় অলঙ্কারের নকশা করতে হতো বিধায় শৈশবেই শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্ট কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তা সমাপ্ত করেননি। আর্ট কলেজের শেষ বর্ষে এসে কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। এরপরে বেশ কয়েক বছর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য কাজ করেছিলেন প্রয়াত এই শিল্পী।

গত ৭ দশকেরও বেশি সময় ধরে নারায়ণ দেবনাথের হাতে জন্ম হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি সিরিয়াস ও মজার কমিকস।

বাংলার শিশু সাহিত্যে এক অসামান্য অধ্যায় রচনা করেছেন তিনি। নিজের অধিকাংশ কমিকসেরই কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং অবশ্যই আঁকা সব তার নিজেরই তৈরি হতো।

বাংলা কমিকসের জগতে নারায়ণ দেবনাথের আগমন ঘটে দেব সাহিত্য কুটিরের সম্পাদক মণ্ডলীর উৎসাহে। তার প্রথম কমিকস হাঁদা ভোঁদা নামটিও ছিল তাদের প্রস্তাবিত। সে সময় বাংলা কমিকস বলতে ছিল একমাত্র প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী এবং  কাফি খাঁ'র আঁকা শেয়াল পণ্ডিত, যা তখন যুগান্তরে প্রকাশিত হত। নারায়ণ দেবনাথের  হাঁদা ভোঁদা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। যা শুকতারা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। শুরুতে নারায়ণ দেবনাথ নিজেই হাঁদা ভোঁদায় অঙ্কন ও কালি বসানোর কাজ করতেন। পরবর্তীতে তা গ্রেস্কেলে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা হয়।

নারায়ণ দেবনাথের প্রথম রঙিন কমিক গোয়েন্দা গল্প ছিল 'বাঁটুল দি গ্রেট'। একবার  কলকাতার কলেজস্ট্রিট থেকে ফেরার পথে তিনি বাঁটুলের কল্পনা করেন ও তৎক্ষণাৎ তার প্রতিকৃতি এঁকে ফেলেন।

পরবর্তীতে প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত মাসিক  কিশোর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো 'বাঁটুল দি গ্রেট'।  এর কিছুদিন পরে দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদক হিসেবে নারায়ণ দেবনাথকে নিয়মিত গোয়েন্দা গল্প লেখার প্রস্তাব দিলে তিনি 'ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়' চরিত্রে কাজ করেন। কিশোর ভারতীতে তার আঁকা প্রথম ধারাবাহিক কমিক স্ট্রিপ হলো 'ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ', যদিও  যার একটি সংখ্যাই কেবল বেরিয়েছিল। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বাঁটুল ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।

নারায়ণ দেবনাথের আরেকটি ভীষণ জনপ্রিয় কমিকস নন্টে ফন্টে। এটি ১৯৬৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা 'কিশোর ভারতী' তে। পরবর্তীতে এই কমিক অবলম্বনে নির্মিত একটু কার্টুন সিরিজ নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে    টেলিভিশনেও।   

নারায়ণ দেবনাথ একই সঙ্গে ছিলেন অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ  শিল্পী। সত্তরের দশকের প্রথম ভাগ থেকেই বিখ্যাত সব সাহিত্যিকদের লেখা বইতে তার আঁকা অলংকরণ ছিল ভীষণ পরিচিত। কেবল তাই নয়, ঠাকুরমার ঝুলির প্রচ্ছদও তার আঁকা। বাংলার প্রচ্ছদ শিল্পী নারায়ণ দেবনাথকে বলা যায় পথপ্রদর্শক।  নব্বই বছর পার হওয়ার পরেও আঁকা থামাননি নারায়ণ দেবনাথ। নিয়মিত তার আঁকা কার্টুন প্রকাশিত হতো দৈনিক পত্রিকায়।

নারায়ণ দেবনাথকে ২০২১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.59 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.59 crore, which is 1,619 times the contract value.

1h ago