প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন কাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আসছেন। তিনি দেশের বৃহৎ ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আসছেন। তিনি দেশের বৃহৎ ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সাজানো হয়েছে নতুন সাজে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীতে আসবেন। সকাল ১০টায় তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন।'

মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিদেশি অতিথিসহ প্রায় ৫০০ আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানান তিনি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের ১৫ মে। একই বছরের ৮ ডিসেম্বর উৎপাদনে আসে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটও। তবে সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রটির পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে সেখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ যথাসময়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে ২টি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু, গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) রেজওয়ান ইকবাল খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ্মার ওপর ক্রসিং লাইন নির্মাণ কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। তখন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।'

তিনি জানান, উদ্বোধনের পরপরই সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা হবে।

ওই দিন দেশের মানুষের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) শাহ্ আব্দুল মাওলা।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরসেদুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে কয়লা আসছে।'

'কয়লা ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য সেখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আছে,' যোগ করেন তিনি।

খোরসেদুল আলম জানান, কয়লাবাহী জাহাজ সরাসরি টার্মিনালে ভেড়ানোর পর ওই জাহাজ থেকেই সরাসরি কনভেয়ারের মাধ্যমে কোল্ডস্টোরে কয়লা পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানেই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। তাই পরিবেশ বিপর্যয়ের সুযোগ নেই।'

সালফার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) স্থাপন করা হয়েছে। ফ্লাই অ্যাশ কমাতে ৯৯ শতাংশ দক্ষতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর (ইএসপি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্প পরিচালক শাহ্ আব্দুল মওলা বলেন, 'এখানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন সাড়ে ৬ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন। তবে রাবনাবাদ চ্যানেলে নাব্যতার কারণে মাদারভ্যাসেল সরাসরি জেটিতে ভিড়তে না পারায় সমস্যা হচ্ছে।'

'২০২০ সালে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করায় মাত্র ৭টি মাদার ভ্যাসেল সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পেরেছিল' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সেগুলোর ধারণক্ষমতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টন। এরপর ড্রেজিং না হওয়ায় ছোট ছোট ভ্যাসেলে করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টন কয়লা বহন করতে হচ্ছে।'

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় যৌথ উদ্যোগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে দেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি হয়।

পরে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তির পর প্রায় ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ধানখালী গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

22h ago