ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের কাছে বাংলাদেশের মেয়েদের বড় হার

শেফালি ভার্মা ও স্মৃতি মান্ধানার দারুণ উদ্বোধনী জুটির পর রিতু মণির নৈপুণ্যে বাংলাদেশ দাঁড়াল ঘুরে। তবে যস্তিকা ভাটিয়া একপ্রান্ত আগলে করলেন গুরুত্বপূর্ণ ফিফটি। এরপর ইনিংসের শেষদিকে দ্রুত রান তুলে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল ভারত। নাগালের বাইরে না থাকলেও প্রতিপক্ষের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপরীতে লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে থামল বাংলাদেশ। সতীর্থদের ব্যাটিং ব্যর্থতার মিছিলে বলার মতো রান পেলেন কেবল সালমা খাতুন।
মঙ্গলবার মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে ১১০ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে ভারত। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২২৯ রান তোলে তারা। জবাবে বাংলাদেশ ৪০.৩ ওভারে অলআউট হয় মাত্র ১১৯ রানে।
লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের দরকার ছিল ভালো একটি ভিত। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা তা পেতে দেননি। ষষ্ঠ ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার শারমিন আক্তার। রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ের বল তার ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক রিচা ঘোষের গ্লাভসে লেগে পৌঁছায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো স্নেহ রানার হাতে। দলীয় ১২ রানে ১৭ বলে ৫ করে ফেরেন শারমিন।
এই ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হন বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যাটাররা। তাদের আসা-যাওয়ার মিছিলে চরম বিপর্যয়ে পড়ে দল। ১৮তম ওভারে স্কোরবোর্ডে ৩৫ রান তুলতে পড়ে যায় ৫ উইকেট। আক্রমণে গিয়েই ফারজানা হককে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন পূজা ভাস্ত্রাকার। ১১ বল খেলে ডাক মারেন তিনি। অধিনায়ক নিগার সুলতানাও টিকতে পারেননি। ১১ বলে ৩ রান করে স্নেহর শিকার হন তিনি।
মাটি কামড়ে পড়েছিলেন আরেক ওপেনার মুর্শিদা খাতুন। তার ইনিংসের ইতি টানেন পুনম যাদব। এক্সট্রা কভারে হারমানপ্রিত কাউরের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি ৫৪ বলে করেন ১৯ রান। ৮ বলে ২ করে স্নেহর দ্বিতীয় শিকার হন রুমানা আহমেদ। আরেকটি সফল রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় ভারত।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় বাংলাদেশকে উদ্ধারের কাজে লাগেন অভিজ্ঞ সালমা ও লতা। জুটিতে অগ্রপথিক ছিলেন সালমা। তবে তাকে বেশিদূর এগোতে দেননি পেসার ঝুলন গোস্বামী। ৪ চারে ৩৫ বলে ৩২ করে উইকেটের পেছনে রিচার গ্লাভসে জমা পড়ে সালমার ক্যাচ। ভাঙে ষষ্ঠ উইকেটে লতার সঙ্গে তার ৬২ বলে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪০ রানের জুটি।
এরপর লতা ও রিতুর ব্যাটে তিন অঙ্কে পৌঁছায় বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ। পুল করতে গিয়ে মিড-উইকেটে ক্যাচ দেওয়া লতা ৪৬ বলে করেন ২৪ রান। ফাহিমা খাতুন ও নাহিদা আক্তারকে নিজের পরপর দুই ওভারে বিদায় করেন অফ স্পিনার স্নেহ। ১০ ওভারে ৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। ৩৬ বলে ১৬ রান করা রিতুকে বোল্ড করে বাংলাদেশের দুর্দশা থামান ঝুলন। জাহানারা ১১ বলে ১১ রানে অপরাজিত থেকে যান।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৪ রান যোগ করে ভারতকে ভালো সংগ্রহের পথ তৈরি করে দেন স্মৃতি ও শেফালি। দেখেশুনে খেলতে থাকা স্মৃতিকে ১৫তম ওভারে ফারজানার ক্যাচ বানিয়ে দলকে ব্রেক থ্রু দেন নাহিদা। ৫১ বলে ৩০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। পরের ওভারে উড়তে থাকা শেফালি ৪২ বলে ৪২ করে রিতুর বলে হন স্টাম্পড। ঠিক পরের ডেলিভারিতে মিতালি রাজকে গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান এই মিডিয়াম পেসার।
চাপের মুখে প্রতিরোধ গড়ে ভারতকে টানতে থাকেন যস্তিকা। চতুর্থ উইকেটে হারমানপ্রিতের সঙ্গে ৬৯ বলে ৩৪ ও পঞ্চম উইকেটে রিচার সঙ্গে ৬৯ বলে ৫৪ রান যোগ করেন তিনি। রিতুর তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে যস্তিকা ৮০ বলে ২ চারে করেন ঠিক ৫০ রান। শেষদিকে স্নেহ ও পূজার ব্যাটে বাংলাদেশের বোলারদের চাপ হয়ে যায় আলগা। দুইশ ছাড়িয়ে ভালো পুঁজি পেয়ে যায় ভারত।
পূজা ৩৩ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। স্নেহর ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ২৭ রান। উইকেটরক্ষক রিচা খেলেন ৩৬ বলে ২৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে রিতু ১০ ওভারে ৩৭ রানে নেন ৩ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা ৯ ওভারে ২ উইকেট পান ৪২ রান খরচায়।
Comments