‘গ্যাসের বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা কম হবে না’

তিতাস গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে আয়োজিত এক গণশুনানিতে গতকাল বুধবার গ্রাহকরা এই সরকারি গ্যাস বিতরণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। তাদের অভিযোগের মধ্যে আছে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যর্থতা, গ্যাস চুরি ঠেকাতে না পারা এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারা।
গত সপ্তাহে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। ছবি: প্রতিকী

তিতাস গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে আয়োজিত এক গণশুনানিতে গতকাল বুধবার গ্রাহকরা এই সরকারি গ্যাস বিতরণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। তাদের অভিযোগের মধ্যে আছে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যর্থতা, গ্যাস চুরি ঠেকাতে না পারা এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারা।

গৃহস্থালি, শিল্প ও জ্বালানি উৎপাদন খাতের গ্রাহকরা আরও জানান, উপযুক্ত সেবা দিতে না পারা সত্ত্বেও তিতাসের দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব 'অযৌক্তিক'।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম মিলনায়তনে এই গণশুনানির আয়োজন করে। গতকাল ছিল শুনানির তৃতীয় দিন।

তিতাস ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে গ্যাস বিতরণ করে। সংস্থাটির ২৯ লাখ বৈধ সংযোগ আছে, যার মধ্যে ২৮ লাখই বাসা-বাড়িতে।

সম্প্রতি সংস্থাটি গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) গড়ে ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

এই সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের দাম বর্তমান ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা হবে।

টিইসি সুপারিশ করেছে, বাসা-বাড়িতে একটি ডাবল বার্নার চুলার খরচ ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং সিঙ্গেল বার্নার চুলার খরচ ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা করার।

জ্বালানি উৎপাদন খাতে প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের মূল্য ৪ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা হবে। এ ছাড়াও, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা, সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা, চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬৫ পয়সা, হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকা ৬০ পয়সা এবং সিএনজি ফিডের জন্য ৪৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা হবে।

শুনানিতে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জানান, তিতাসের প্রস্তাব এবং টিইসির সুপারিশ কোনোটাই 'গ্রহণযোগ্য নয়'।

তিনি তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লার কাছে জানতে চান, তারা কী আসলেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করতে চান কি না।

হারুনুর রশীদ মোল্লা কয়েক লাখ অবৈধ সংযোগের কথা স্বীকার করেন এবং জানান, এগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্নের একটি প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, এ কাজের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শামসুল মন্তব্য করেন, 'আপনাদের অভ্যন্তরীণ টাস্কফোর্সের ওপর আমাদের কোনো ভরসা নেই, কারণ আপনারা এত বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেননি।'

তিতাসের এমডি জানান, সীমিত জনসম্পদ নিয়ে তিতাসকে একটি বড় এলাকাজুড়ে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। এ কারণে তারা পুরো বিষয়টির দেখভাল করতে সমস্যা পড়েন।

'যখন আমরা এক জায়গায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি, তখন অন্য জায়গায় নতুন সংযোগ নেয়,' যোগ করেন হারুনুর।

তিনি ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।

শামসুল জানতে চান, তিতাসের ৭৫ শতাংশের মালিক হওয়া সত্ত্বেও সরকার কেন বিনিয়োগ না বাড়িয়ে পুরো লভ্যাংশ নিয়ে যায়।

এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিতাসের এমডি।

তিতাসের নথি অনুযায়ী, সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে গত বছর ৩৪৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু অংশীদারদের ২১৭ কোটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪৪০ কোটি টাকা হস্তান্তরের পর সেই মুনাফা লোকসানে রূপান্তরিত হয় এবং লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১২ কোটি টাকা।

শামসুল বলেন, 'এমনকি মহামারি পরিস্থিতিতেও (তিতাসের) বোর্ড সদস্যরা জুম মিটিং করেছেন এবং সে অনুযায়ী সম্মানী গ্রহণ করেছেন।'

তিনি আরও জানতে চান, সম্প্রতি নতুন গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের পরেও কেন তিতাস অসংখ্য নতুন সংযোগের জন্য টাকা নিয়েছে।

এমডি জানান, তারা এ ধরনের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে চান, কিন্তু 'কেউ টাকা নিতে চাইছে না'।

বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, অবৈধ সংযোগ তিতাসের কর্মীদের যোগসাজশে এবং তাদের অজ্ঞাতসারে, উভয় প্রক্রিয়াতেই দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'গ্যাসের বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা কম হবে না।'

তিনি বলেন, 'গ্যাস বিতরণকারী সংস্থাগুলো সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করে। তারা সবাই মিলে একই পরিমাণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছে।'

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, তাদের ১ কেজি সুতা উৎপাদনের জন্য ২৭ টাকার গ্যাস প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, 'আমাদের পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। উৎপাদন খরচ কম থাকলেই কেবল আমরা বাজারে টিকে থাকতে পারবো। আমাদের শিল্পকে পাটের ভাগ্য বরণ করতে দেবেন না।'

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সদস্য গোলাম সারোয়ার বলেন, 'আমরা পুরোপুরি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের মেশিনগুলো ঠিক আছে, আমাদের হাতে প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মী আছে, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের অভাবে আমরা লোকসানের মুখে পড়ি।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Nor’wester brings relief, triggers waterlogging in Ctg

The nor'wester or kalboishakhi, a storm that is natural to this season, struck the port city and adjoining areas immediate after 3:00pm and the downpour followed soon afterwards

23m ago